স্টাফ রিপোর্টার
সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসবকে ঘিরে মুন্সীগঞ্জেও চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে জেলা প্রশাসন মঙ্গলবার বেলা ১১টায় প্রস্তুতিসভার আয়োজন করে। জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের সভাপতিত্বে আয়োজিত ভাচুর্য়াল এই সভায় পূজোর প্রস্তুতির খুঁটি-নাটি এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় জানানো হয় গেলো বছরের চেয়ে এবার আরও বেশী পূজো হচ্ছে আটটি মন্ডপে। তাই জেলায় এবার ৩২১টি পূজা মন্ডপে জাঁকজমক পূজোর আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন প্রায়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ আব্দুল কাদির মিয়ার পরিচনালায় জেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাগণ এতে অংশ নেন এবং সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাগণ আলোচনা করেন। সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমর কুমার ঘোষ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অজয় চক্রবতর্ী ও মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল প্রমুখ। নিবিচ্ছন্ন বিদ্যুত ব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন জেলা পল্লী বিদ্যুত সমিতির সিনিয়র জিএম এ এইচ এম মোবারক উল্ল্যা। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দও এই সভায় মতামত পেশ করেন। জেলা প্রশাসক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভায় আলোচকগণ বলেন, বাংলাদেশ তথা মুন্সীগঞ্জ সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল। এখানে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সাবার’ এমন পরিবেশেই বাঙালি ধমর্ীয় উৎসবগুলো পালিত হয়। এ যেন বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। সভায় প্রতিটি পূজা মন্ডপে সরকারি অনুদান প্রদানসহ সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান জেলা প্রশাসক। এছাড়া মন্ডপগুলোতে যাতায়তের সড়কের ব্যাপারেও এলজিইডিকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
পূজারীরা বলেন, বাংলার মাটি-নদী-আকাশ প্রস্তুত মাতৃপূজার বরণ করার জন্য। প্রতিমা তৈরিতে মাটির শেষ প্রলেপটুকুও শুকিয়ে এসেছে অনেকটা। কয়েকদিনের মধ্যেই বাহারি রং চড়বে প্রতিমার গায়। নিপুণ শিল্পী তার তুলির আলতো ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলবেন মা দুর্গাকে। জেগে উঠবেন সরস্বতী। গণেশের গায় উঠবে নক্সীদার কুচির দুধসাদা ধুতি। লক্ষ্মীর হাসি ঝরে পড়বে। আর বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে যাবে মা দুর্গার সিগ্ধ শান্ত চোখ। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পুজারীকে।
আজ বুধবার শুভ মহালয়া। চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী-দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই চন্ডীতেই আছে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে দেবী-দুর্গার। বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মহালয়া। আজ ভোরে চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে আবাহন ঘটবে দেবী-দুর্গার। দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে মতর্যলোকে। ১১ অক্টোবর সোমবার দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পূজার্থীরা দুর্গাপূজার আগমনধ্বনি শুনতে পাবেন।
প্রতি বছর মহালয়ার সাতদিন পর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটলেও এবার এর ব্যতিক্রম ঘটছে। এ বছর ১১ অক্টোবর পঞ্চমী ও ষষ্ঠী তিথি একই দিনে পড়ায় দুদিনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান একই সঙ্গে উদ্যাপিত হবে। এই কারণে মহালয়ার ছয় দিন পর ১১ অক্টোবরই ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী-দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
এরপর ১২ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১৩ অক্টোবর মহাষ্টমী এবং ১৪ অক্টোবর মহানবমী শেষে ১৫ অক্টোবর বিজয়ী দশমী ও প্রতি বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনের দুর্গোৎসব। করোনার কারণে জনসমাগম এড়াতে এবার মহাষ্টমীতে কুমারী পূজার আয়োজন থাকছে না।#
Leave a Reply