আজ ২৩শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ :

পদ্মার চরে মিনি কক্সবাজার

মো. শওকত হোসেন: মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীর তীরঘেষে বালুর চড়ে গড়ে উঠেছে “পদ্মা বিলাস রিসোর্ট” এর পাশে যেনো মিনি কক্সবাজার। গেলে মনে হবে, আপনার সামনে এক টুকরো কক্সবাজার। সারি সারি বাহারি রঙের ছাতার তলায় হেলানো চেয়ার সাজানো। দূরে তাকালে সমুদ্রের বেলাভূমির দৃশ্য। পদ্মার উত্তাল ঢেউ আপনার দিকে বারবার এগিয়ে আসবে। চারদিকে বালু চিকচিক স্থলভূমি। সামনে রুপোর মতো চকচকে পানি। এটা পদ্মা, আমাদের প্রিয় পদ্মা নদী। এখানে আসলে আপনি সত্যিই মুগ্ধ হবেন পদ্মা নদীর অপরূপ জলরাশি দেখে।

কী নেই এখানে,বিশাল জলরাশি। পদ্মায় হেলেদুলে ভেসে বেড়ানো জেলেদের নৌকা। আর পদ্মার তীরে হেঁটে বেড়ানো। সব মিলে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে আপনি লৌহজংয়ের পদ্মার পাড়ে নয়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আছেন। মূলত এ কারণেই অনেকে পদ্মা বিলাস রিসোর্টকে বলে থাকেন ‘মিনি কক্সবাজার’। আবার অনেক ট্যুরিস্টরা এখন থেকে ঘুরে গিয়ে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে লেখেছে গরিবের কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসলাম। 

কয়েক বছর আগে পদ্মা নদীর চরে গড়ে উঠেছিলো “পদ্মা রিসোর্ট” নামক একটি রেস্টুরেন্ট,সেটি গত বছর পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সেই পদ্মা রিসোর্টের কাছেই এখন নতুন করে গড়ে উঠেছে “পদ্মা বিলাস রিসোর্ট” নামক এই রেস্টুরেন্ট। উপজেলার ঘোড়দৌড় বাজার ভূমি অফিসের উল্টে সাইটে পদ্মা সেতুর পূর্ব-উত্তর প্রান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে গড়ে উঠা নতুন এই রিসোর্টটি চালু করার ফলে আবার পর্যটক আসতে শুরু করছে। এদের বেশির ভাগই আসছে লৌহজং, টঙ্গীবাড়ি, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ থেকে। লৌহজংয়ের পদ্মার পাড়ে গড়ে ওঠা মিনি কক্সবাজার খ্যাত স্থানটি এখনও ব্যাপকভাবে পরিচিত না হওয়ার কারণে ভ্রমণপিপাসু অনেক মানুষই বঞ্চিত হচ্ছেন পদ্মা বিলাস রিসোর্টের সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে। এখন থেকে পুরো দৃশ্যমান পদ্মা সেতুটি খুব কাছাকাছি দেখতে পাবেন।

এছাড়া ঠিক পড়ন্ত বিকেল। যখন ক্লান্ত সূর্যটা হেলে পড়ে, ছুটে চলে পশ্চিমা দিগন্তে। ঘড়ির কাঁটায় পাঁচটা। সন্ধ্যে নামার আগে। সূর্যের মায়াবী রশ্মি যেন পদ্মা জলে মিশে যায়। পদ্মার জলে চোখ ফেরালে যেন আরেকটা সূর্য বিদায়ের দৃশ্য দৃশ্যমান। নদীর বুকে খেলা করে জোয়ার-ভাটার স্রোত। ঠিক ওই মুহূর্তে জোয়ার থাকুক আর ভাটা থাকুক, সূর্যাস্তের চিকচিকে আলো নিবিড় সখ্যতা গড়ে তোলে ঢেউয়ের সঙ্গে এমন মনোমুগ্ধকর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। সূর্যাস্তের দারুণ দৃশ্যের মাঝে হারিয়ে যান অনেকে। এবং খুব ভোরে পদ্মার এই চরে বসে আপনি দেখতে পাবেন সারা রাত পদ্মা নদীতে জেলেদের শিকার করা মাছ। পদ্মা নদীর সেই নামকরা ইলিশসহ অনেক প্রজাতির মাছই আপনি কিনতে পারবেন এখান থেকে, এবং শিমুলিয়া ঘাট থেকে একদম টাটকা। এখানে দর্শনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত । তখন দেখা যাবে পদ্মা নদীর শান্ত রূপ। একটা সন্ধ্যায় পদ্মা নদীতে সূর্যাস্ত দেখলে পরবর্তী একশোটা সন্ধ্যার কথা মনে থাকবে আপনার। ট্রলার অথবা খেয়ানৌকা নিয়ে পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াতে পারবেন। আপনি দুপুরে পদ্মার জলে গোসলও করতে পারেন। যারা সাঁতার জানেন না তাদের জন্য এখানে বিনামূল্যে লাইফ জ্যাকেটের ব্যাবস্থা আছে। তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

কীভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে লৌহজং ঘোড়দৌড় বাজার ভূমি অফিসের ঘাটে আসার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়টি হচ্ছে বাবু বাজার ও গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের সামনে থেকে গাংচিল পরিবহন বাস সরাসরি লৌহজংয়ের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এই পরিবহনে এসে ঘোড়দৌড় বাজার ভূমি অফিসের সামনে বাস থেকে নামলেই দেখতে পাবেন এই রিসোর্ট। এই রিসোর্টে পারাপার ট্রলার ভাড়াসহ প্রবেশ মূল্য-৫০ টাকা। এই ৫০ টাকায় আপনি পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখতে পারবেন। এছাড়া লাইফ জ্যাকেট,নদীর পাড়ে বিভিন্ন রংঙের ছাতা যুক্ত হেলানো চেয়ার সম্পুর্ণ বিনামূল্যে ব্যাবহার করতে পারবেন। ঢাকা থেকে ৮০ টাকা ভাড়া আর দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময়ের বিনিময়ে আপনি পৌঁছে যাবেন মিনি কক্সবাজারে। ফেরার সময় একই বাসে আবার ঢাকা চলে যাবেন। এছাড়াও আপনি মাওয়া শিমুলিয়া এসে অটোরিক্সায় করে এখানে আসতে পারবেন। শিমুলিয়া মাওয়া ঘাট থেকে অটো ভাড়া ২০ টাকা।

ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য এই রিসোর্টের আশপাশে কোনো হোটেল, রিসোর্ট, বোর্ডিং এখনো তৈরি করা হয়নি। কোথায় খাবেন:

বেশির ভাগ মানুষেরই ইচ্ছা থাকে পদ্মার তীরে বসে পদ্মার সেই নামকরা ইলিশ খাওয়ার। এই রিসোর্টে খাবারের ব্যাবস্থা আছে। পদ্মার ইলিশ ভাজা,বেগুন ভাজা,বিভিন্ন আইটেমের ভর্তা,ডাল,ভাতসহ পেকেজ-৩৫০ টাকা এবং মোরগ চিকেন,ভাত ডাল,ভর্তা,ভাতসহ ২৫০ টাকা,এবং বিভিন্ন ধরনের মালাই চা,দুধ চা,আলু বোখরা চা,মাল্টা চা, পাবেন প্রতি কাপ ৪০ টাকা। এছাড়া ফুচকা ও চটপটি প্রতি প্লেট ৮০ টাকা। বড় সাইজের আস্ত ইলিশ খেতে চাইলে আগেই অর্ডার দিতে হবে। এ ছাড়া নদীর সব ধরনের মাছ পাওয়া যায়।

সতর্কতা:

একটি বিষয় সবার জানা দরকার। সাঁতার না জানলে গোসল করার সময় পদ্মার বেশি গভীরে যাবেন না। আপনার একটু অসচেতনতায় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ :