ইমরানকে বিদায় করতে পার্লামেন্টের ৩৪২ আইনপ্রণেতার মধ্যে অন্তত ১৭২ জনের সমর্থন প্রয়োজন ছিল বিরোধীদের। সেখানে ১৭৪ ভোট পেয়ে তাদের অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়ে ইমরানের বিদায় নিশ্চিত হয়।
শনিবার সকাল থেকে দফায় দফায় অধিবেশন মুলতবি, পার্লামেন্টের বাইরে নানা জল্পনা কল্পনা, সেরাপ্রধানকে অপসারণের গুঞ্জন, ইমরানের মন্ত্রিসভার বৈঠক এবং সম্ভাব্য সামরিক শাসন ঠেকাতে গভীর রাতে আদালতে আবেদনের পরিস্থিতি আরও জটিলতার দিকে গড়ানোর ইংগিত দিচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার আগে আগে পদত্যাগ করেন স্পিকার আসাদ কাইসার। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তিনি ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রে’ অংশ নিতে পারবেন না।
এরপর প্যানেল স্পিকার হিসেবে পিএমএল-এনের আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে পাকিস্তানের জাতীয় পারিষদে অধিবেশন শুরু হয়। রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে শুরু হয় ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি। স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে তিনি ফলাফল ঘোষণা করেন।
ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের অধিকাংশ এমপি আগেই অধিবেশ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ইমরান নিজেও পার্লামেন্টে ছিলেন না।
পিএমএল-এনের মুখপাত্র মরিয়ম আউরঙ্গজেব জানান, অধিবেশনের সভাপতিত্ব করায় সাদিক নিজে ভোট দিতে পারেননি। পিটিআইয়ের ভিন্নমতাবলম্বীদের ভোটের আর দরকার হয়নি।
এর আগে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট হবে কিনা, সেই সংশয়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ। তবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সেনাপ্রধানের মধ্যে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইমরান বলেছেন, প্রতিরক্ষা বিভাগে পরিবর্তন আনার কোন পরিকল্পনা তার নেই। ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, সেনাপ্রধানকে সরানোর বিষয়ে কোন আলাপ হয়নি, এর কোন সম্ভাবনাও নেই। সংবিধান অনুসারে আইন মেনে আমি নিজের কর্তব্য পালন করব।
বৃহস্পতিবার পাক সুপ্রীমকোর্ট প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন এবং জাতীয় পরিষদ পুনর্বহাল করে ফের অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণের আদেশ দেন। সে আদেশ মোতাবেক শনিবার পাক পার্লামেন্টে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এসবের প্রেক্ষিতে শুক্রবার এক টুইটে সাবেক এই পাক ক্রিকেট অধিনায়ক বলেন, আমি সর্বশেষ বল পর্যন্ত খেলতে চাই। দেশবাসীর উদ্দেশে বলছি, আমি পাকিস্তানের জন্য শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। এদিকে পাক জাতীয় পরিষদ পুনর্বহাল ও ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের আদেশ বাতিল করায় ইমরান বিরোধীরা বেশ চাঙ্গা। ইমরানের পর তারা প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য পাক মুসলিম লীগ নেতা শাহবাজ শরীফের নাম ঘোষণা করেছে। কিছু কিছু গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রস্তুতি নিতে বিরোধীরা ইতোমধ্যে এই মুসলিম লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
বিরোধীরা মনে করছে, পাক রাজনীতিতে শনিবার অতি নাটকীয় কোন ঘটনা না ঘটলে এই ভোটের মাধ্যমেই বিদায় ঘণ্টা বাজবে ইমরান খানের। তাই তারা শাহবাজ শরীফকে এ পদের জন্য যোগ্য মনে করছে। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ১ বছর। এই সময়ের মধ্যেই সাধারণ নির্বাচন দিতে হবে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারকে। সুপ্রীমকোর্টের রায়ে আনন্দ প্রকাশ করে টুইটারে পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি লিখেন, ‘গণতন্ত্রই শ্রেষ্ঠ প্রতিশোধ! জিও ভুট্টো, জিও আওয়াম, পাকিস্তান জিন্দাবাদ।’
জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শীর্ষ আদালতের এ রায় গণমানুষের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। তিনি আরও বলেন, এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সংবিধান ও পাকিস্তানের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে। আদালতের স্বতন্ত্র ও মর্যাদা সমুন্নত থেকেছে। পার্লামেন্ট ও এর সার্বভৌমত্বকে দৃঢ় করতে সর্বসম্মতক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়ায় শীর্ষ আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শাহবাজ শরীফ। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন জনগণের জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লড়াই লড়ব।’ বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের এক বেঞ্চ ওই আদেশে পাক মন্ত্রিসভাকে পুনর্বহাল এবং শনিবার পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেন।
Leave a Reply