যাকাত সম্পর্কে আমরা অনেকেই উদাসীন বা অনেক বিষয়ে আমরা অবগত নই। যাকাতের জটিল হিসেব থেকে কিছুটা সহজ করে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো — যাকাত ২০২২
১ বাংলাদেশী ৪২,০০০ টাকা,বা আমেরিকান ৫০০$ ডলার যদি বছর শেষে আপনার সোনা, রুপা, টাকা আর সম্পত্তির টোটাল মূল্য হয় তবে আমাদের উপর যাকাত (২.৫০%) ফরজ।
২) বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে প্রতি বছর ওই দিনের হিসেবে যাকাত দিতে হবে। যেমন আমি যদি ১০ রমজানে যাকাত দিতে চাই তাহলে প্রতি বছর ১০ রমজানে আমার সম্পত্তির হিসেব করে যাকাত দিতে হবে।
৩) নিজের ছেলে, মেয়ে,স্বামী, স্ত্রী ,নাতী,নাতনীদের যাকাত দেওয়া যাবে না। ভাই, বোন যদি দরিদ্র হয় যার নিজের যাকাত দেবার সামর্থ নেই তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের পরিবারে ভয়ে আমরা গোপনেও যাকাত দিতে পারবো এবং তা বৈধ হবে।
৪) যাকাত দেবার সময় মাইকিং করে, হাটবাজারে ঘোষণা দেবার দরকার নেই বা তা কাম্য নয়. বরঞ্চ আমাদের মনে নিয়ত থাকলেই হবে।
৫) আমি কাউকে ধার দিয়েছি। সেই টাকার উপরও যাকাত দিতে হবে। এখন ধরি কোন লোক টাকা নিলে সাধারণত ফেরত দেয়না , তবে যাকাত না দিলেও চলবে। কিন্তু যদি দুই বছর পর ফেরত দেয় সেক্ষেত্রে দুই বছরের যাকাত একবারে দিতে হবে।
৬) যাকাত অমুসলিমদের দেওয়া যাবেনা। অমুসলিমদের জন্য সাদাকা। যাকাত ব্যাক্তির অধিকার। যাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করা, ইসলাম প্রচার, ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা দেওয়া, ওয়াজ মাহফিল করা, দ্বীনি বই-পুস্তক ছাপা, ইসলামী মিডিয়া তথা রেডিও, টিভির চ্যানেল করা ইত্যাদিও জায়েয নয়।
৭) ঋণ থাকলে সেটি আমাদের সম্পত্তির হিসেবে থেকে বাদ যাবে। বাড়ির লোন এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি লাক্সারী লোন, তাছাড়া আমাদের বাড়ির মূল্য লোনের থেকে বেশি। আমি যদি বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকি তবে বাৎসরিক ভাড়ার উপর যাকাত দিতে হবে।
৮) আমাদের স্ত্রী কোথাও গেলে কনুই পর্যন্ত গহনা পরেন। লকারে আরও দু ‘মন জমা আছে কিন্তু নগদ টাকা নেই। তাহলে স্বর্ণ বিক্রি করে হলেও প্রতিবছর (২.৫০%)যাকাত দিতে হবে। “কিছু তো জীবনে দেওনি সব বাবার বাড়ি থেকে উপহার পেয়েছি” — এই ডায়ালগে চলবেনা। তবে কোন স্বামী তার স্ত্রীর স্বর্ণের যাকাত দেন তবে তাতে সমস্যা নেই।
৯) ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও যাকাত ফরয হয়। হজ্বের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। অনলাইনে যত ধান্দাবাজি (ক্রিপ্টো, বিটকয়েন , চাইনিজ )পয়সা আছে সব হিসেবে দিতে হবে।
১০) যাকাতের টাকা আলাদা করে রাখা হয়েছে। কিন্তু ফকির-মিসকিনকে দেওয়ার আগেই তা চুরি হয়ে গেল বা অন্য কোনোভাবে নষ্ট হয়ে গেল তাহলে যাকাত আদায় হয়নি। পুনরায় যাকাত দিতে হবে।
১১) স্ত্রী কাজের লোক রাখার সময় বলে, মাসে এত টাকা করে পাবে আর ঈদে একটা বড় অংক পাবে। এক্ষেত্রে ঈদের সময় দেওয়া টাকা যাকাত হিসাবে প্রদান করা যাবে না। বাড়ির কাজের ছেলে বা কাজের মেয়েকে যাকাত দেওয়া জায়েয যদি তারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়। তবে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে যাকাতের অর্থ দিলে যাকাত আদায় হবে না।
১২) বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে পালিত গরু ছাগল আর ভেড়ার যাকাত দিতে হবে। ৩০টি গরুতে একটি গরু আর ৪০টি ছাগল আর ভেড়াতে একটি ছাগল। ফসলের ক্ষেত্রে বছর নয়; যতবার ফসল উৎপাদন হবে ততবার যাকাত দিতে হবে। ২৫ মন মতান্তরে ১৬ মনে ১০ ভাগের এক ভাগ যদি বৃষ্টির পানিতে ফসল হয় আর সেচের পানিতে হলে ২০ ভাগের এক ভাগ।
যত হালাল আয় করি আর দান করি যদি যাকাতের টাকা ঠিকমত না দেই তবে আমাদের পুরো সম্পত্তি বেহালাল। অত্যন্ত জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখছি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ৩২ বার যাকাতের কথা বলেছেন। এই লেখার উদ্দেশ্য আনন্দ দেওয়া নয় বরং এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য আল্লাহর নির্দেশানা।
সংগৃহীত, সংকলিত সহজিকরণে
মোঃ আসলাম হোসেন, মুন্সীগন্জ।
Leave a Reply