লৌহজং প্রতিনিধি:
মামী শ্বাশুড়ির সাথে স্বামীর পরকীয়ার কথা জেনে যাওয়ায় মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী মো. রনিকে (২২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর বাসা থেকে নিহত গৃহবধূ স্বর্না আক্তার (২২) এর ঝুলত লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বর্না আক্তার উপজেলার বেজগাঁও গ্রামের শাহজাহান ঢালীর মেয়ে। এ ঘটনায় স্বার্ণার বাবা বাদী হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে জানা যায়, বিগত ৬ বছর আগে একই ইউনিয়নের পাশের কুড়িগাওঁ গ্রামের নুর ইসলাম বেপারীর ছেলে মো. রনির সাথে স্বর্নার বিয়ে হয়।
বিয়ের বেশ কিছু দিন পার হলেও স্বর্নার কোন সন্তান না হওয়ায় স্বর্নার ওপর মাঝে মধ্যে চাপ সৃষ্ঠি করত রনির পরিবার। এমনকি তাকে তালাক দেয়ার ভয় দেখাতো রনি। ডাক্তারের নানান চিকিৎসা শেষে স্বর্নার কোল জুড়ে যমজ দুটি সন্তান আসে। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে তাদের বয়স এখন দেড় বছর।
এলাকাবাসি জানান, স্বর্নার স্বামী রনি অনেক টাকা পয়সা থাকায় এবং স্বর্নার বাবা একটু দুর্বল হওয়ায় রনির পরিবার কখোনই স্বর্নাকে ভালো দৃষ্ঠিতে দেখতো না। স্বর্নার ছোট বোন রুপা জানান, বেশ কিছুদিন আগে রনির ছোট ভাই (স্বর্নার দেবর) রবিনের সাথে তার মামী শ্বাশুড়ির আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্বর্না তার স্বামী রনিকে বিষয়টি জানায় এবং রবিনকে শাসন করতে বলেন।
এরপর থেকে স্বর্নার উপর শুরু নানান নির্যাতন। এক পর্যায়ে স্বর্না জানতে পায় রনি হাসানের সাথে ও তার মামী শ্বাশুড়ির অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে স্বর্না ঈদের পর সন্তান দুটিকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে।
আর রনির পরিবার ভাবে রনির সাথে মামীর পরকীয়ার কথা জানতে পেরে স্বর্না তার বাবার বাড়ি চলে গেছে আর আসবে না। তাই নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে গত শনিবার রনি হাসানের পরিবার তার ছোট বোনের জামাই উজ্জল কে পাঠায় স্বর্নাকে তার বাবার বাড়ি থেকে রনিদের বাড়িতে নেয়ার জন্য। স্বর্না তার ননদের স্বামী উজ্জলের সাথে কামরাঙ্গীর চর ফিরে যায় রনিদের বাসায়।
এদিকে স্বর্না তার বাবাকে বাড়ি থেকে আম নিয়ে যেতে বলে তার বাসায়। নিহত স্বর্নার পরিবার জানায়।
স্বর্নার বাবা শাহজাহান ঢালী জানান, তার মেয়ে আম দুধ খেতে চেয়েছিল, বুধবার সকালে তার মেয়ের জন্য আম, দুধ নিয়ে স্বর্নার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে কেরানীগঞ্জ পৌছালে স্বর্নার ননদের স্বামী উজ্জল স্বর্নার বাবাকে ফোনের মাধ্যমে জানায় স্বর্নার সাথে রনির ঝগড়া হচ্ছে আপনি দ্রুত বাসায় চলে আসেন।
এ খবর শুনে শাহাজাহান ঢালী খুব দ্রুত স্বর্নাদের কামরাঙ্গীর চরের বাসায় পৌছে দেখে স্বর্নারস্বামী রনি, ও তার মা, বোন ও বোনের স্বামী উজ্জল সবাই বাসার ড্রইং রুমে বসে খোশ গল্প করছে। স্বর্নার কথা জানতে চাইলে বলে স্বর্না তার রুমে আছে খোজ নেন। স্বর্নার রুমটি ভেতর দিক দিয়ে আবজানো ছিলো।
স্বর্নার বাবা দরজা ধাক্কা দিতেই দেখে মেয়ের নিথর দেহ একাংশ মাটিতে লুটিয়ে পরেছে আর গলাটি ফ্যানের সাথে ওড়না লাগিয়ে ঝুলছে। এ অবস্থা দেখে সে অনেকটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশেকে যানান। জানানো হয় সকল আত্মীয় স্বজনকে। তিনি আরো জানান আমার মেয়ে মৃত্যু বিষয় সম্পূর্ণ সাজানো। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন সবায় মিলে আমার মেয়ে কে হত্যা করেছে। আগে থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েকে নির্যাতন করতো। আমি সমাধানে চেষ্টা করতাম।
পুলিশ এসে মৃত দেহ ঝুলান্তে থেকে নিচে নামিয়ে উদ্ধার করে। এরপর কামরাঙ্গীর চর থানায় নেয়া হয় স্বর্নার লাশ। পুলিশ মামলাটি নিতে প্রথমে গড়িমসি করলেও পরে বৃহস্পতিবার আত্মহত্যা উল্লেখ করে মামলাটি রুজু করে। মামলায় আসামী করা হয় শুধু রনিকে।
এই বিষয়ে কামরাঙ্গীর চর থানার অফিসার ইনচাজ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জনান, অভিযোগের ভিক্তিতে আমরা একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার অপরাধে একটি মামলা রুজু করি মামলা নং- ৩৪ ।
এই বিষয়ে আমরা প্রাথমিক পযায়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা কারী রনিকে আমরা গ্রেফতার করা হয়েছে । তাকে কোটে চালান করা হয়েছে। তবে ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা।
মেয়ের মা নাজমা বেগম বলেন গত সপ্তাহে আমাদের মেয়ে জামাই মো. রনি মেয়েকে এসে নিয়ে যায়। আজ আমার মেয়ে লাশ হয়ে ফিরে এসেছে। আমার মেয়ে খুবই ভালো শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার চাই।
স্বর্ণা আক্তারের ছোট বোন রুপা আক্তার বলেন, আমার বোনের জামাই মো. রনি পরকীয়া সাথে জড়িত ছিলেন। বিয়ের পর সন্তান জন্মের পর থেকে আমার বোনের প্রতি অনীহা লক্ষ্য করেছি।আমার বোন আত্মহত্যা করেনি। হত্যা করা হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার চাই।
এদিকে ময়না তদন্ত শেষে স্বর্নার লাশ তার বাবার বাড়ি লৌহজংয়ের বেজগায়ে বিকেলে নিয়ে আসা হলে স্বর্নার আত্মীয়-স্বজনদের কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে উঠে।#
Leave a Reply