মো. শওকত হোসেন: অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, আমি হচ্ছি কম্পিউটার সাইন্সে বিভাগীয় প্রধান,ইলিকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিভাগীয় প্রধান, আমি সাইন্স কি জানি, এবং টেকনলজি কি এটাও আমি যানি, মনে রেখো স্মার্টফোন তুমি ব্যাবহার করছো না স্মার্টফোন তোমাকে ব্যাবহার করছে। স্মার্টফোন ঠিক করেছে এটা তোমাকে দিয়ে দেখাবে এটা তোমাকে দিয়ে ঠিক করাবে, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার পকেট থেকে একটি লাল কালারের বাটন মোবাইল ফোন বাহির করে দেখিয়ে বলেন, আমি এই ফোনটি ব্যাবহার করি, আমি স্মার্ট ফোন ব্যাবহার করিনা। আমার ফেসবুক করিনা,আমি ইউটিউব করিনা। তোমরা মনে করছো ফেসবুকে যতো বেশি লাইক ততো বেশি আনন্দ। তুমি আজ ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করে এখানে ৫০টা লাইক পেয়েছো তা অন্যকে দেখাচ্ছ দেখো আমি কত লাইক পেয়েছি। ওখান থেকে তোমাকে বেরিয়ে আসতে হবে। স্মার্টফোন ব্যাবহার করে লাভবান করছো ফেসবুকের মালিক জুকারবার্গকে গুগলের মালিককে। তুমি তোমার পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করে ফেসবুককে গুগলকে লাভবান করছো। তুমি যদি জীবনে কিছু করতে চাও তাহলে স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ো না। মাদক খাওয়া যেমন খারাপ,আমার মনে হয় স্মার্টফোনে আসক্ত হওয়া এর থেকে বেশি খারাপ। যখন করোনা ছিলো তখন ক্লাস হয়েছে অনলাইনে তখন তোমাদের হাতে স্মার্টফোন দেয়া হয়েছিলো লেখাপড়া করার জন্য তোমরা লেখাপড়া করেছো, কিন্তু পাশাপাশি আরেকটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে সেটা হলো তোমরা স্মার্টফোনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখনত স্মার্টফোনে লেখাপড়া করছো না স্কুলে যাচ্ছো কিন্তু স্মার্টফোনটা না দেখলে ভালো লাগে না। তোমার পছন্দ-অপছন্দ সব জানে গুগল। এখান থেকে বের না হলে তোমরা আর স্মার্ট থাকবে না।আমাদের দেশে ছেলে-মেয়ে সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
তোমরা যদি জানার জন্য লেখাপড়া করো তবে বাংলাদেশটা বদলে যাবে। বাংলাদেশের দায়িত্ব তোমাদের হাতে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, বইপড়া একটা অসাধারণ ব্যাপার। যে বই পড়ে সে অন্যদের থেকে আলাদা। তবে,দুঃখজনকভাবে বিশ্বব্যাপী বইপড়া কমে গেছে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার লৌহজং বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রঙ্গনে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আলোচনা সভায় লেখক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল। আর্থ—সামাজিক উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র অবারিত বাংলার সহযোগিতায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রের সভাপতি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও চলতি বছরে একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের সহধর্মীনি অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক।
‘এসো বিজ্ঞান শিখি, প্রযুক্তিভিত্তিক দেশ গড়ি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে শিক্ষার্থীকে উদ্বুদ্ধকরণ সভায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেওয়ান মো. জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্যদেন বিদ্যালয়ের সভাপতি বিএম শোয়েব সিআইপি শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অবারিত বাংলার সহসভাপতি অলক কুমার মিত্র। অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানটি শিক্ষক—শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল বক্তৃতায় আরও বলেন, জিপিএ ফাইভ পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ না, জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া আনন্দের সাথে পড়াশোনা করতে হবে। পরীক্ষা বেশি থাকলে লেখাপড়া ভালো হয়— কথাটি সত্যি না।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘গবেষণা করার মতো আনন্দ কোনো কিছুতে নেই। তাই আনন্দ পেতে হলে গবেষণায় মনোযোগ দাও।’
অধ্যাপক জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের বই পড়ার মধ্য দিয়ে কল্পনা শক্তি বাড়ানোর পরামর্শ দেন। বক্তৃতা শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তাঁর লেখা বই উপহার হিসেবে বিতরণ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল জানান, উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমে গেছে। শতকরা ১৮ ভাগ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান চর্চার বাইরে রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় উদ্বুদ্ধকরণে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।#
Leave a Reply