রবিবার , ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আরো
  7. এক্সক্লুসিভ নিউজ
  8. কলাম
  9. কৃষি
  10. খুলনা বিভাগ
  11. খেলাধুলা
  12. গণমাধ্যম
  13. চট্টগ্রাম বিভাগ
  14. জাতীয়
  15. ঢাকা বিভাগ

প্রধান উপদেষ্টার নিকট খোলা চিঠি – নুতন বাংলাদেশ গড়ায় জনগণের প্রত্যাশা

প্রতিবেদক
সভ্যতার আলো ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪ ১০:৩১ অপরাহ্ণ

 

ফারুক আহমেদ

১৯৭১ সালে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছরেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের শাসন আমলে দেশের জনগণ ভোটের অধিকার, বাক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একই সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, ব্যাঙ্কিং খাত থেকে শুরু করে, প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে । ক্রস ফায়ার, গুম, খুন, হত্যা থেকে শুরু করে, হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট হয়েছে, জনগণের অর্থ বিদেশে পাচার করে বিদেশে বেগমগঞ্জ তৈরি করেছে ।

গত জুলাই – অগাস্ট ২০২৪ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণ আন্দোলের রূপ নেয়। যে আন্দোলনে সাড়া দিয়েছে দেশের এবং সারা বিশ্বে অবস্থানরত আপামর বাংলাদেশী জনগণ! জীবন দিয়েছে আবু সাঈদ এর মতো শত শত ছাত্র জনতা, এমনকি বাদ যায়নি নিষ্পাপ শিশুর জীবনও । ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রথম আলোতে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী সেইদিন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৬২২ এবং আহত সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি ছাত্র জনতা, অনেকেই মনে করছেন প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ও আহতের সংখ্যা তার চেয়েও আরো অনেক বেশি । পাখির মতো এমন মানুষ হত্যার দৃশ্য ১৯৭১ সালের পর বাংলাদশের মানুষ আর কখনো দেখিনি ।

সেই আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটানোর পর, গত ৮ই অগাস্ট ২০২৪ বাংলাদেশে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী কালীন সরকার ! বর্তমান অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের কাছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা পাহাড় সমতুল্য। যে সরকারের মাধ্যমে দেশের মানুষ পেতে চায় একটি সুন্দর ও বৈষম্যমুক্ত নুতন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য অন্তর্বতী কালীন সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে । ২০২৪ সালের এই অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের কাছে সাধারণ জনগণের বিশেষ প্রত্যাশাগুলো হলো:

(১) আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা:

বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচার সরকারের আমলে বিচার ব্যাবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে । তারা আজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রথমেই আইনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যাবস্থা বাতিল করেছে । স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। এই ব্যাপারে বর্তমান অন্তর্বর্তী কালীন সরকার যে পদক্ষেপ নিতে পারে তা হলো:

বিচারকগণ যাতে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে, প্রতিটি রায় যেন তারা দিতে পারে সততা ও আইনের ভিত্তিতে, কোন দল বা সরকারের চাপে নয় সেই ব্যাবস্থার নিশ্চিত করুন ।

স্বৈরাচার সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরে ও তার আগে যে সমস্ত ক্রস ফায়ার, গুম, ঘুন, ও হত্যা হয়েছে, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সেই সকল অপরাধের বিচার করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন।

সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন তৈরি করুন, যাতে দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে ভয় । প্রতিটি দুর্নীতির বিচার সঠিক ভাবে সম্পন্ন করে দুর্নীতি বাজদের শাস্তি নিশ্চত করুন, তবেই দেশে দুর্নীতি কমে আসবে ।

পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন। কোনরূপ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই যাতে পুলিশ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করুন । পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী যেন জন-বান্ধব বাহিনীতে পরিণত হয় এবং তারা যেন অন্যায়ভাবে কারো আজ্ঞাবহ বাহিনীতে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করুন । নুতন বাংলাদেশে ক্রস ফায়ার ও পাখির মতো গুলো করে হত্যা করে আর কারো মায়ের বুক যাতে খালি না করে তা নিশ্চিত করুন !

(২) একটি সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা :

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য সবচেয়ে গরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং একটি সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা । এর জন্য অন্তর্বর্তী কালীন সরকারকে যা করতে পারে তা হলো :

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করুন । কমিশনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও যোগ্যতাসম্পন্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়োগ প্রদান করুন ।

ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিশ্চিত করুন, নকল বা জাল ভোটার বাতিল করুন । নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা করুন । নির্বাচনে জালিয়াতি প্রতিরোধ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন ।

(৩) অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সংস্কার করা :

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রবৃদ্ধি পেলেও, এটি আয় বৈষম্য, বেকারত্ব এবং ক্রমবর্ধমান সাধারণ মানুষের উন্নয়ন ব্যাহত করেছে । এই উন্নতি সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়নি। অন্তর্বর্তী কালীন সরকারকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে:

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এমন ভাবে গড়ে তুলুন, যাতে মানুষের জন্য কর্ম সংস্থান তৈরি হয় । পোশাক শিল্প সহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদেশীদের সরিয়ে আমাদের দেশের মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করুন। এর জন্য বিশেষ আইন তৈরি করে বাংলাদেশের সেই সব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশী নাগরিককে চাকুরী প্রদান বাধ্যতামূলক করুন । যে ন্যাশনালিজম আইন তৈরি করেছে সৌদি আরব সহ মিডল ইস্টের প্রায় প্রতিটি দেশ ।

প্রবাসী কল্যাণের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোতে নুতন নুতন কর্মসংস্থানের বাজার সৃষ্টি করুন । দেশের জনগণকে প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বেকার জনগণকে জনসম্পদে পরিণত করুন, যাতে তারা একদিকে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে, অন্য দিকে বিদেশের মাটিতে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে ।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন একটি জাতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন । এই খাতে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান করে, প্রযুক্তির উন্নয়ন করে, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে, উৎপাদিত পণ্যের সুষ্ঠ বাজারজাত করণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করুন । পোশাক ও ঔষধ শিল্প সহ প্রতিটি বড়ো শিল্পের উন্নয়নের বাধা গুলো দূরীকরণের ব্যাবস্থা করুন ।

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এবং কৃষি খাতকে সংস্কারের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিন। প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে কৃষি পদ্ধতির আধুনিকীকরণ করুন । কৃষকদের জন্য স্বল্প সুদে কৃষি ঋণের ব্যাবস্থা সহজ করুন । কৃষকদের কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করুন। কৃষি পণ্যকে প্রক্রিয়ার মাধমে প্যাকেটজাত খাদ্য হিসেবে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার অর্জনের পথকে সহজ করুন।

অপ্রয়োজনীয় সরকারী ব্যয় রোধ করে এবং কর সংস্কারের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করে বাজেট ঘাটতি কমানোর ব্যবস্থা প্রবর্তন করুন।

(৪) শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা :

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড । পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশে প্রতি বছর নুতন প্রজন্মের একটি বড়ো অংশ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী অর্জন করলেও, আমাদের শিক্ষার গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার যা করতে পারে তা হলো :

চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান ও পাঠ্যসূচি প্রবর্তন করুন । এক সাথে গতানুগতিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের পাশা পাশি, প্রতিটি শিক্ষার্থীকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রফেশনাল সফ্ট স্কিল ট্রেনিং প্রদান করার জন্য শিক্ষা আইন সংস্কার করুন । একজন শিক্ষার্থী তার ডিগ্রী অর্জনের সাথে সাথে, এই সব সফ্ট স্কিলগুলো অর্জন করতে পারলে, তার জন্য চাকুরী পেতে অনেক সহজ হবে । একই সাথে প্রতিটি প্রতিষ্টানও তাদেরকে চাকুরীতে নিযুক্ত করতে আগ্রহ প্রকাশ করবে । সেই সফ্ট স্কিল গুলো হলো : মাইক্রোসফট অফিস, কোডিং, প্রোগ্রামিং, কমিউনিকেশন স্কিল, কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট স্কিল, কাস্টমার সার্ভিস স্কিল, মার্কেটিং এন্ড সেলস স্কিল, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্কিল, সুপার ভাইজার ও ম্যানেজমেন্ট স্কিল, টীম লিডিং স্কিল সহ চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সফ্ট স্কিলগুলো শিক্ষাদান পদ্ধতি চালু করুন । বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় উন্নত স্কুল সুবিধা, ডিজিটাল শ্রেণীকক্ষ এবং সেখাকার স্কুল গুলোতে প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদানের ব্যাবস্থা করুন ।

বর্তমানে সারা বিশ্বে ফ্রীলান্স জবের মাধ্যমে বৈদেশিক আয় করার একটি বড়ো উৎস। somoynews.tv ২৩ মে ২০২৪ এর মতে, ‘সম্প্রতি সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনে এক প্রতিবেদনে ফ্রিল্যান্সার নিয়োগে শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। যাতে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম’। এই ফ্রিল্যান্স খাতে দক্ষতার অভাবের কারণে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে ।

সরকারি পর্যায়ে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ফ্রীলান্স জগতে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করুন । এই খাতে বাজেট বৃদ্দি করুন ।প্রতিটি শিক্ষার্থীকে লেপটপ প্রদান সহ, সব ধরণের ফ্রীলান্স ট্রাইনিং এর সুযোগ করে দিন । Freelancing.com এর মতে ২০২৪ সালের সেরা ডিমান্ড ১০টি ফ্রীলান্স জব হলো: (1) . Copywriting, Content Marketing, Report Writing (2). Data Analyst (3). Digital Marketing (4). Graphic Designer (5). Mobile App Developer (6). Photographer (7). Social Media Manager (8). Videographer (9). Virtual Assistant (10). Website Development, Coders, Programmers & Software Engineers । সরকারি ভাবে এইসব ফ্রীলান্স ট্রেনিং গুলো প্রদান করতে পারলে, এক দিকে আমাদের নুতন প্রজন্মের যেমন কর্মের সংস্থান অনেক বৃদ্ধি পাবে, অন্য দিকে তারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও দেশে নিয়ে আসতে পারবে । তবে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, এই সব ট্রেনিংগুলো যেন কেবল সার্টিফিকেটেই বিদ্যমান না থাকে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে হাতে কলমে ফ্রিল্যান্স শিক্ষাদানের ব্যাবস্থা নিশ্চিত করুন ।

একই সাথে বর্তমানে বাংলাদেশে বেঙের ছাতার মতো, শত শত এমনকি হাজারো হতে পারে ফ্রীলান্স ট্রেনিং সেন্টার গড়ে উঠেছে । প্রচুর প্রতারক ট্রেনাররা কেবল মাত্র চটকধারী বিজ্ঞাপন ও ভিডিও বানিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে অসহায় মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেও, শিক্ষার্থিরা কিছুই শিখতে পারছে না । তাই প্রতিটি ফ্রিল্যান্স ট্রেনিং সেন্টারকে রেজিস্ট্রেশন করে তা মনিটরিং ব্যাবস্থা করুন এবং এই খাতে দুর্নীতি বন্ধ করার ব্যাবস্থা করুন ।

বর্তমানে বাংলাদেশের ১০ লাখেরও বেশি তরুণ-যুবক অনলাইন ফ্রীলান্সার হিসেবে Fiverr, Upwork সহ বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করছে। সব মিলিয়ে তাদের বার্ষিক আয় ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি (jagonews24.com ২৪ মে ২০২৪) । তবে বর্তমান বিশ্বে ফ্রীলান্সার দের পেমেন্ট পাওয়ার জন্য মোস্ট পপুলার Paypal পেমেন্ট সিস্টেম প্রায় প্রতিটি দেশে চালু থাকলেও, বাংলাদেশে Paypal পেমেন্ট সিস্টেম এখনো চালু হয়নি । ফলে বাংলাদেশী ফ্রীলান্সররা কাজের পর পেমেন্ট পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাচ্ছে । অন্তর্বর্তী কালীন সরকারকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদশে PayPal ব্যাবস্থা চালু করে ফ্রীলান্সারদের বিদেশী কোম্পানি / উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পেমেন্ট নিয়ে আসার পথকে সহজ করুন । এই সমস্যাটি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সাথে সমাধান করুন ।

দেশের প্রতিটি নাগরিকের মানবিক গুণাবলী যাতে সমৃদ্ধ লাভ করে এবং আগামী নুতন প্রজন্মকে সৎ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, মানবিক উন্নয়ন বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে সম্পৃক্ত করুন ।

 

(৫) স্বাস্থ্য সেবাদান ব্যাবস্থার উন্নয়ন করা:

একটি দেশের উন্নয়নে সে দেশের স্বাস্থ্য সেবা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ । বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবাদান ব্যাবস্থা উন্নত নয় বলে, দেশের একটি বড়ো অংশ চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর প্রতিবেশী ভারত সহ অন্যান্য দেশে গমন করছে। এতে বাংলাদেশ একটি বড়ো অংকের বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে । আমাদের স্বাস্থ্য সেবা দান ব্যবস্থার উন্নত করার জন্য অন্তর্বর্তী কালীন সরকার যা করতে পারে তা হলো :

উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য, আধুনিক প্রযুক্তিতে আমাদের হাসপাতালগুলো সুসজ্জিত করুন। স্বাস্থ্যসেবার জন্য বাজেট বৃদ্ধি করুন । সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা কভারেজ বাস্তবায়ন করুন। গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করুন, সেখানে হাসপাতাল গুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করুন । গ্রাম অঞ্চলে দক্ষ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন ।

উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে ডাক্তারদের চিকিৎসার মান বৃদ্ধি করুন। তবেই দেশেরই চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবে এবং মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া থেকে বিরত থাকবে । এতে অতিরিক্ত বৈদেশিক অর্থ খরচও সাশ্রয় হবে । একই সাথে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির পথগুলো খুঁজে বের করে তা বন্ধ করুন ।

(৬) মানবাধিকার ও মানবিক মূল্যবোধ উন্নয়ন করা:

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবিক মূল্যবোধের ব্যাপক ভাবে অবক্ষয় ঘটেছে । সামাজিক কাঠামো তৈরির মাধ্যমে এইসব অবক্ষয় চিহ্নিত করে তার নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবেলা করতে হবে । অন্তর্বর্তী কালীন সরকার এর উন্নয়নের জন্য যা করতে পারে তা হলো :

নির্বিচারে ক্রস ফায়ার, গুম , খুন ও হত্যার মতো অমানবিক কর্মকান্ডগুলো নুতন বাংলাদেশে আর যাতে না ঘটে, তা নিশ্চত করুন । এর প্রতিকারের জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করুন ।

প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। কেউ যাতে কারো প্রতি জুলুম, অত্যাচার করতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করুন। কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাকে প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান, অপরাধীকে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করুন ।

জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার জন্য নীতি বাস্তবায়ন করুন । সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে সেই ব্যাপারে আইনি ব্যাবস্থা প্রণয়ন করে ও তা বাস্তবায়িত করুন ।

নারীর অধিকার রক্ষা করুন । শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নারীর প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি করে এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার মতো সমস্যাগুলিকে মোকাবেলা করে নারীর প্রতি অবিচার রোধ করার প্ৰয়োজনীয় ব্যাবস্থা করুন ।

পারিবারিক বন্ধন থেকে শুরু করে সামাজিক বন্ধনের সকল স্তরগুলোতে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে গেছে। সামাজিক আইন ও তা বাস্তবায়ন করে এবং বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও আলোচনার মাধ্যমে মানুষের প্রতি মানুষের এই মূল্যবোধ উন্নতি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করুন ।

(৭) রাজনৈতিক সংলাপ ও জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা:

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক। এক রাজনৈতিক দল, তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে মাটির সাথে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য যা করণীয় তাই করছে, যা বিশ্বে বিরল । একদল রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে প্রতিপক্ষ দল বাধার সৃষ্টি করার জন্য, তারাও পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে । এই অপসংস্কৃতি বিশ্বের আর কোনো দেশে আছে কি না জানা নেই । এই ধরণের অপসংস্কৃতি দূরীকরণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা একান্তই জরুরী । বর্তমান অন্তর্বতী কালীন সরকার এই অবস্থা দূরীকরণের জন্য যা করতে পারে তা হলো :

একটি নুতন বাংলাদেশ গড়ার জন্য, সমস্ত রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে সংলাপ শুরু করুন । একই সাথে সাধারণ জনগণের মতামতকে মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিন ।

প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মাঝে দূরত্ব দূর করার জন্য, সবাইকে একই আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার পরিবেশ তৈরি করুন । রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সহনশীলতা ও সোহার্দপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

(৮) পরিবেশ সুরক্ষার ব্যাবস্থা করা:

স্বৈরাচারি সরকারের দোসরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো এবং কোন প্রকার নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করেই, যত্রতত্র কল কারখানা তৈরি করেছে । একই সাথে কল – কারখানা পরিচালনার কোড ওফ কন্ডাক্ট না মেনে পুরো দেশের পরিবেশকে হুমকির পথে নিয়ে গেছে । ঢাকার বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি পরিপূর্ন ভাবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ! এই অবস্থা শুধু ঢাকা নয়, দেশের অনেক নদ নদীরই একই অবস্থা দাঁড়িয়েছে । এতে বাংলাদেশের মৎস সম্পদ সহ সকল প্রকার জীব বৈচিত্র্যে অনেক নষ্ট হয়ে গেছে । বিশুদ্ধ বায়ুরও ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বর্তমানের অন্তর্বতী কালীন সরকার পরিবেশ ব্যবস্থা সংস্কার করার জন্য যা করতে পারে তাহলো:

দেশের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করার জন্য কঠোর পরিবেশ বান্ধব আইন প্রণয়ন করে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করুন। পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই পরিবেশ রক্ষার জন্য এই বিষয়ে শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি বৃদ্ধি করে তা সাধারণ জনগণের দ্বারে পৌঁছে দিন ।

বিশেষ করে দেশের সমস্ত কলকারখানা থেকে বর্জ ও দূষিত কেমিক্যাল নদী, খাল, বিল ও জলাশয়ে যাতে না পড়ে তা নিশ্চিত করুন । এই ব্যাপারে সকল অনিয়মগুলো বন্ধ করার জন্য কঠোর এই তৈরি করে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করুন।

রাস্তায় ফিটনেস্ট বিহীন সমস্ত গাড়ির ধোঁয়া থেকে বাতাসকে সুস্থ রাখার জন্য ফিটনেস বিহীন সব ধরণের গাড়ি – যানবাহনের লাইসেন্স বাতিল নিশ্চিত করুন । লাইসেন্স বিহীন কোন ড্রাইভার যেন রাস্তায় বের হতে না পারে তার জন্য কঠোর আইন করুন ।

জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে সৌর এবং বায়ুর মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো বের করে তার উন্নয়নে মনযোগ দিন, এবং সেই খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করুন । বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন প্রকল্পগুলি হাতে নিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা বিকাশ করুন।

বনায়নের প্রচেষ্টা সম্প্রসারিত করুন । জলাভূমি, বন এবং জীব বৈচিত্র্যের স্থানগুলোকে চিহ্নিত করে সেইগুলোকে রক্ষা করুন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি দূরীকরণ করার জন্য উপায় গুলো প্রয়োগ করুন, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় তার প্রয়োগ নিশ্চিত করুন । পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন সব সরকারী সংস্থা ও এনজিও গুলোর মাঝে সমন্বয় সম্প্রসারণের মাধ্যমে সবাইকে এক সাথে কাজ করার পরিবেশ তৈরী করুন ।

প্রতিটি নদী খনন করে নদীর গভীরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নদীগুলোকে সচল করুন। নদীগুলির নব্যতা ফিরিয়ে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকদের উন্নয়নে সহয়তা করুন । এর ফলে একদিকে বাংলাদেশের খাদ্যে যেমন স্বয়ং সম্পর্ণতা বৃদ্ধি পাবে, অন্য দিকে তা বর্ষা মৌসমে বন্যা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করবে । বর্ষা মৌসুমে ভারতের বাঁধ ছেড়ে দিলেও এই নদীগুলোর মাধ্যমে পানি দ্রুত সরে গিয়ে বাংলাদেশে বর্তমান বন্যার ক্ষতি কমাতে সাহায্য করবে । নদী খননের জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করুন ।প্রভাবশালীদের দ্বারা দখলকৃত সকল নদী ও খালগুলোকে পূনরুদ্দার করে তা সচল করুন ।

(৯) সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা নিশ্চত করা :

সংবাদপত্র হলো একটি দেশের আয়না স্বরূপ, যেখান থেকে দেশের সাধারণ জনগণ দেশের অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারে। অন্তর্বতী কালীন সরকার বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সংস্কার যেভাবে করতে পারে তাহলো :

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা করে করুন । সাংবাদিকদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করে এমন আইন প্রণয়ন করুন । স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রচারের জন্য মিডিয়া গুলির উপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ এবং প্রভাব হ্রাস করুন। সরকারি কর্মকাণ্ডে এবং দেশের সব বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করুন এবং সাংবাদিকদের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করুন। যদি কোন সংবাদ দেশের সার্বভৌমত্ব ও দেশের জনগণের স্বার্থ নষ্ট করে তার উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করুন ।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করে সেই সকল কালো আইন বাতিল করুন । সাংবাদিকরা নিপীড়নের ভয় ছাড়াই যাতে নিশ্চিন্ত ভাবে কাজ করতে পারেন তা নিশ্চিত করুন। সাংবাদিকদের নৈতিকতা উন্নয়ন, অনুসন্ধানী স্কিল এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য সংবাদিকদকের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করুন।

(১০) নুতন বাংলাদেশে তরুন প্রজন্ম “জেন – জি” সম্পৃক্ততা তৈরি:

বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেশের উন্নয়নে তরুণ প্রজন্ম “জেন – জি” রা অনেক অবদান রাখছে । বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য অভিজ্ঞদের পাশাপাশি আমাদের তরুণ প্রজন্মের মেধাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে তরুণদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে ! অন্তর্বতী কালীন সরকার এর জন্য যে বহুমুখী পদক্ষেপগুলো নিতে পারে তা হলো :

অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার উপর জোর দেওয়ার জন্য বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিককরণ করুন। তরুণদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এবং আর্থিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তাদের ভিতর উদ্যোক্তার সংস্কৃতি গড়ে তুলুন। তরুণদের জন্য বিশেষ উদ্ভাবন হাব এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম ব্যাবস্থা তৈরি করুন। নুতন প্রজন্ম “জেন – জি”কে নুতন বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবেলা করতে তাদের সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করুন ।

দেশ পরিচালনায় নেতৃত্বের ভূমিকায় তরুণ প্রজন্মকে সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করুন। জাতীয় উন্নয়নের প্রতি দায়িত্ববোধ লালন করে নীতি-নির্ধারণ এবং সামাজিক উদ্যোগে তরুণ কণ্ঠের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করুন, যাতে দেশ পরিচালনায় তারা অংশগ্রহণ করতে পারে এবং একদিন তারা নিজেরাই অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশকে পরিচালনা করতে পারে ।

উন্নত বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য তরুণ প্রজন্ম “জেন – জি” কে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে সুসজ্জিত করুন। উচ্চ-গতির ইন্টারনেটে সরবরাহ প্রদান করুন।দেশে ও বিদেশের এক্সপার্ট দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে হাতে কলমে ডিজিটাল টেকনোজি শিক্ষা দেওয়ার ব্যাবস্থা করুন ।

তরুনদের মাঝে দৃঢ় নৈতিক মূল্যবোধ, দেশীয় সাংস্কৃতি এবং জাতীয় বিষয় গুলো সম্পর্কে তাদের অনুভূতিগুলো জাগিয়ে তুলুন। সততা, সহনশীলতা ও মানবতার প্রতি সম্মানবোধ তৈরি করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করুন । যাতে তারা আরো ভালো মানুষ ও দেশ প্রেমিক হয়ে উঠে, যার ফলে তারা যেন আগামীর নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয় ।

(১১) প্রবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রবাসী ট্রাইবুনাল গঠন করা:

বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা ১ কোটি ৫০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে । পোশাক শিল্পের পর প্রবাসীদের আয় দ্বিতীয় অর্থনৈতিক আয়ের উৎস হলেও, প্রবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য তেমন কোন আইন তৈরি হয়নি । যার ফলে প্রবাসীরা বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । এমনকি পোশাক শিল্পের অবদানের কারণে তাদের মূল্যায়ন যেভাবে করা হচ্ছে, প্রবাসীদের এতো অবদান থাকা সত্ত্বেও তাদের সেই ভাবে সীকৃতি প্রদান বা মূল্যায়ন হয়নি । অন্তর্বতী কালীন সরকার প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যা করতে পারে তা হলো:

বেশির ভাগ প্রবাসীরা বাংলাদেশে নিজ পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে ! বিদেশে কষ্টে অর্জিত অর্থ দেশে পাঠালেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই অর্থ দেশে অবস্থানরত আপন ভাই বোনেরা প্রবাসীদের সাথে প্রতারণা করে, তাদের নিজেদের (ভাই বোনদের) নামে সম্পত্তি কিনছে। প্রবাসীরা সম্পত্তি কিনলেও এলাকার প্রভাবশালীরা সেই সম্পত্তির ভুয়া দলিল বানিয়ে দখল করে নিচ্ছে (Banglanews24.com – ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ – প্রবাসীর বাড়ি দখলে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ / Somokal.com ১২-০৯-২০২৪ – খিলগাঁওয়ে জাল দলিলে প্রবাসীর সম্পত্তি দখল)।

প্রবাসীরা বিদেশে থাকে বলে বিচার শালিসি করেও তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । এলাকার বিচারকদের ঘুষের মাধ্যমে এবং প্রভাব খাটিয়ে বিচারের রায় দেশে অবস্থানরত প্রতারকদের পক্ষেই নিয়ে যাচ্ছে ! এতে ব্যাপক ভাবে প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । প্রবাসীদের অর্থ সম্পদ আত্মসাতের পর তাদের আপন আত্মীয় ভাই বোনেরাও বিভিন্ন ভাবে তাদের হুমকি, ধমকি দিচ্ছে ও ভয় দেখাচ্ছে ! এমনকি অনেকে প্রাণ নাশের হুমকিও দিচ্ছে । এই সকল প্রতারনার ফলে অনেক প্রবাসী সারা জীবন বিদেশে কাটালেও দেশে ফিরে কষ্টে দিনযাপন করছে । তারা তাদের কষ্টে অর্জিত টাকার সম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।

প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য “প্রবাসী ট্রাইব্যুনাল” বিশেষ আইন তৈরি

করা একান্ত জরুরী। সেই আইনের মাধ্যমে দ্রুত বিচার করে প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করুন ।

কোন প্রবাসী তার ৫০ লক্ষ টাকার ফ্ল্যাটের মধ্যে ৪০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করলেও তার বাকি ১০ লক্ষ টাকা ব্যাংক থেকে লোন পেতে হয়রানি হতে হয়, এমনকি তাও সে পাবে না যদি না দেশের কেউ তার জন্য গ্যারান্টি হয় ! দেশের ব্যাংকগুলি থেকে প্রবাসিদের ঋণ প্রদান সহজ ও দ্রুত করার জন্য আইন প্রবর্তন করুন ।

প্রবাসীদের সকল সমস্যাগুলো আইডেন্টিফাই করে তার সমাধানের ব্যাবস্থা করুন । কোন প্রবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন থেকে দ্রুত সহযোগিতা প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রবর্তন করুন এবং প্রবাসীদের সহায়তা নিশ্চিত করুন । প্রবাসিরা দেশে ফিরে আসার পর তাদের প্রয়োজনে ঋণ প্রদান করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করুন ।

(১২) সংবিধান সংস্কার করা:

সংবিধান হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন । যে আইন নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা করে থাকে । ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা ও স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে এই সংবিধান তৈরি করা হলেও, সাম্প্রতিক শৈরাচারী সরকার ও তার আগের সরকারগুলো এই সংবিধানকে কেটে ছিড়ে নিজেরা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যেভাবে প্রয়োজন সেই ভাবেই তারা এর পরিবর্তন করেছে ! যেখানে সাধারণ জনগণের স্বার্থ নষ্ট হয়েছে , নষ্ট হয়েছে ভোটার অধিকার থেকে শুরু করে মানুষের বাক স্বাধীনতার অধিকার ।

বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকার, এই সংবিধানকে সংস্কার করাই হবে প্রধান কাজ,যাতে দেশ ও জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত হয়, জনগণই যাতে হয় সকল ক্ষমতার উৎস ! একই সাথে গণতান্ত্রিক শাসন ও আইনগত ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংবিধানের ভূমিকা বিবেচনা করে এই পরিবর্তনগুলি সূক্ষ্ম এবং সতর্কতার সাথে করুন ।

দেশের স্বার্থে এই সংবিধানকে সংশোধন / পুনর্লিখন করার জন্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ জনগণের পরামর্শ গ্রহন করুন , যাতে নূতন বাংলাদেশের মানুষ একটি জনকল্যান মুখী সংবিধান পায় ! গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে স্বচ্ছতা এবং জবাব দিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই সংবিধানে জনসাধারণের চাওয়া পাওয়ার বহিঃপ্রকাশ নিশ্চিত করুন ।

এই সংবিধান সংস্কার করার জন্য দেশের অভিজ্ঞ ও প্রকৃত দেশ প্রেমিকদের দ্বারা গঠিত একটি শক্তিশালী টিম দিয়ে বর্তমান সংবিধান সংশোধন / পুনর্লিখন এর কাজ করবে এটাই আজকের বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি । অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার যেন আগামীতে বিলুপ্ত হয়ে না যায় তা নিশ্চিত করুন । সেটা করার জন্য আগামী নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করার সক্ষমতা অর্জন করবে, সেই সকল রাজনৈতিক দলকে লিখিতভাবে ও আইনগত ভাবে বাধ্য করুন, যাতে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারই ক্ষমতায় আসবে, তারা যেন বর্তমান অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের সংবিধান সংশোধিত / পুনর্লিখন বাস্তবায়িত করেন ! তা নিশ্চিত করার জন্য আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দল যাতে তাদের নির্বাচনী ইশতিহারে এটা উল্লেখ করে সেইব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করুন ।

একই সাথে সংবিধান সংশোধন / পুনর্লিখন যেন কেবল মাত্র জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে রচিত তা নিশ্চিত করুন । নুতন সংবিধান যেন কোনো ব্যাক্তি বা দলের স্বার্থে ব্যাবহৃত না হয় সেটা নিশ্চিত করুন !

২০২৪ সালের এই অন্তর্বতী কালীন সরকারের ভূমিকা বাংলাদেশের জন্য, পুরো জাতির জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বর্তমানে বাংলাদেশের সংস্কারের জন্য এটাই সুবর্ণ সুযোগ এসেছে । এই সংস্কারের সাফল্য নির্ভর করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সততা ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার, আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখার এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের অন্তর্ভুক্তি ও সহযোগিতার মনোভাবের সাথে সম্পৃক্ত থাকার উপর।

অন্তর্বতী কালীন সরকার দেশের কল্যানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করে নুতন বাংলাদেশ উপহার দিবে, এটাই আজকের বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা । একই সাথে এই সংস্কারে ১৯৭১ সালের শহীদের স্বপ্ন এবং ২০২৪ সালে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, সেই সকল শহীদ ছাত্র জনতার স্বপ্ন যেন পূরণ হয়, সেই দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। তবেই শহীদের রক্তদান সার্থক হবে এবং নুতন বাংলাদেশ সুন্দর ভাবে গড়ে উঠবে ।

 

– লেখক: লেখক ও গল্পকার

রিয়াদ, সৌদি আরব

সর্বশেষ - মুন্সীগঞ্জ

আপনার জন্য নির্বাচিত

মুন্সীগঞ্জে হাতুড়ির আঘাতে প্রাণ গেলো রাজমিস্ত্রির

নারীর ক্ষমতায়নসহ সকল অর্জনের অংশিদার গণমাধ্যমকর্মীরা-ইন্দিরা

বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ লাল মিয়া মারা গেছেন

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা

মুন্সীগঞ্জে নৌকা মার্কায় কেন্দ্রিয় যুবলীগ নেতা সুমনের গণসংযোগ 

টঙ্গীবাড়ি বাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এড. নাসিমা বেগম

শ্রীনগরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে গলদা-কার্প মিশ্রচাষে সফালতা অর্জন করায় পুরস্কার পেলেন সাংবাদিক আরিফ হোসেন

এস্কোয়্যার গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন আর নেই

বন্যার্তদের জন্য মুন্সীগঞ্জে গণত্রাণ সংগ্রহ 

বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে টঙ্গীবাড়ির সুমন হালদার