ফারুক আহমেদ
অন্তর্বর্তী কালীন সরকার দেশ সংস্কারের যে ভূমিকা হাতে নিয়েছে, তা দেশের সাধারণ জনগণের প্রাণের দাবি । দেশ সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী কালীন সরকার ইতিমধ্যেই ৬ টি কমিশন গঠন করেছেন এবং গত অক্টোবর মাস থেকেই তারা কাজ শুরু করছেন । তবে দেশ সংস্কারের কাজে কেবল সকল প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করলেই হবে না না । সংস্কার প্রয়োজন আমাদের প্রতিটি সমাজের, প্রতিটি মানুষের মন মানসিকতার।
একটি শিশুর জন্মের পর, সর্বপ্রথম সে যার মুখ দেখে সে হলো–তার মা ও বাবা। আস্তে আস্তে শিশুটির কাছে তার বাবা-মাই হয়ে উঠে তার পরম আপনজন । বাবা মায়ের সাথেই শিশুটির গড়ে উঠে প্রথম সখ্যতা । শিশুর জন্মের পর, সে তার বাবা মাকে যেমন আচরণ করতে দেখে, সেটাই সে অনুকরণ করে । যার ফলে, একটি শিশু বাবা মায়ের ভালো আচরণ গুলো যেভাবে রপ্ত করে, ঠিক একই ভাবে সে বাবা মায়ের খারাপ আচরণ গুলোও তার উপর প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের সন্তানদেরকে, আমাদের নুতন প্রজন্মকে আমরা যদি ভালো মানুষ হিসাবে তৈরি করতে চাই, আদর্শ মানুষ বানাতে চাই, তাহলে সর্বপ্রথম আমাদের প্রতিটি বাবা মাকে আদর্শবান হতে হবে, ভালো মানুষ হতে হবে।
একটি পরিবারের মতো ঠিক একই ভাবে একটি সমাজ ও রাষ্ট্রও গড়ে উঠে । আমরা যদি একটি আদর্শবান, ভালো জনগণ তৈরি করতে চাই, তাহলে আমাদের সমাজের ও রাষ্টের নেতাদেরকেও আদর্শবান ও ভালো মানুষ হতে হবে। কারণ আমাদের সমাজের মানুষগুলো, তাদের নেতাদের আদর্শই ফলো করে, আর এটাই স্বাভাবিক! তাই যারা আমাদের সমাজ ও দেশের নেতা, তারা যদি নিজেরাই দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠেন, তাহলে তাদের কাছে থেকে আমরা আদর্শবান ও ভালো জনগণ আশা করতে পারি না !
সমাজ সংস্কারের ব্যাপারে বিশ্ববিখ্যাত রিচার্ড গ্রেভ বলেন, “তুমি সমাজসেবা নিজ গৃহ থেকে শুরু করো, তাহলে সামগ্রিকভাবে দেশের কল্যাণ আসবে”। প্রশ্ন হলো, সেটা কিভাবে শুরু করব ?
সেটা করার জন্য আমাদের প্রথমে প্রতিটি বাবা মাকে ভালো মানুষ হতে হবে । আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা আর কখনও মিথ্যা কথা বলবো না, ঘুষ খাবো না, দুর্নীতি করবো না, অন্যের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করব না, মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করব না, অহংকারী হব না, কারো সাথেই অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করব না । আমরা যদি সেটা করতে পারি, তাহলে আমাদের সন্তানেরা, আমাদের নুতন প্রজন্মরা আমাদের দেখে দেখে তা অনুসরণ করবে এবং তারাও একদিন ভালো মানুষ হবে । তারা একদিন আমাদের স্বপ্নের নুতন বাংলাদেশ উপহার দিবে । একই সাথে আমাদের সন্তানদেরকে, নুতন প্রজন্মকে আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য ও ভালোমানুষ হওয়ার জন্য তাদেরকে মানবিক গুণাবলীও শিক্ষা দিতে হবে। কোনো দুর্নীতিবাজ বাবা মায়ের কাছ থেকে ভালো সন্তান প্রত্যাশা করা দুরূহ ব্যাপার !
বড়ই পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়ে গেলেও, বেশিরভাব ক্ষেত্রেই যারা আমাদের সমাজ ও দেশের নেতা ছিলেন, তাদের একটি বড়ো অংশ ছিল দুর্নীতিবাজ। তাদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল ক্ষমতা কুক্ষিগত করা, দুর্নীতি করা, জনগণের অর্থ সম্পদ লুটপাট করে নিজেদের আখের গোছানো । নিজের দেশে জমিদার হওয়া এবং বিদেশে বেগমগঞ্জ তৈরি করা !
তারা শুধু ক্ষমতা দখল, আর দুর্নীতি ও জনগনের অর্থ সম্পদই লুটপাটই করেনি, তারা তাদের আচার আচরণে দেশের জনগণকেও অসৎ বানিয়ে ফেলেছে। তাদের অহংকারী কথাবার্তা এবং অশ্লীল ভাষাগুলোও সাধারণ জনগণের স্বভাব-চরিত্রকে এমন ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করেছে ! যার ফলে যা হয়েছে, আমাদের পুরো সমাজ ব্যাবস্থাই অনেকটা ধ্বংস হয়ে গেছে !
আজকাল মানুষের প্রতি মানুষের মায়া-দয়া, ভক্তি-শ্রদ্ধা তেমন নেই বললেই চলে! বেশির ভাগ মানুষের একটাই চিন্তা, কিভাবে সে পরের অর্থ সম্পদ লুটপাট করবে, আত্মসাৎ করবে । এই দুরাবস্থা এমনকি অনেক পরিবারের মাঝেও বিরাজ করছে । একই পরিবারে যার ক্ষমতা ও অর্থ সম্পদ বেশি, সে ছোটদের উপর নিপীড়ন ও নির্যাতন চালাচ্ছে ! ক্ষমতাবান ছোটরাও বড়ো দের উপর তাই করছে । আজকের সমাজের এই অবস্থা খুবই ভয়াবহ ! নুতন বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রতিটি সমাজকে এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পাওয়া একান্তই জরুরী ।
প্রতিটি পরিবারের মানুষ যদি ভালো মানুষ হওয়ার জন্য প্রাকটিস শুরু করে, তারা যদি প্রতিজ্ঞা করে, যে অনেক অন্যায় করেছি জীবনে আর কোন অন্যায় করব না। তাহলে তার একটি পজিটিভ প্রভাব সমাজের উপর পড়বে । যারা আমাদের সমাজ ও দেশ পরিচালনা করছেন, সেই সকল নেতাদের উপরও এর প্রভাব পড়বে । এতে সেই সকল নেতাদের মাঝেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগবে এবং তারাও নিজেদের পরিবর্তনের কথা চিন্তা করবে।
কোনো নেতা যদি অন্যায় করে, তাহলে সাধারণ জনগণই এক সাথে হয়ে সেই সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, জবাব দিহি চাইবে । তাহলে সেই সকল সমাজ ও দেশের নেতারা নুতন কোনো অন্যায় করতে, দুর্নীতি করতে ভয় পাবে! ফলে আমাদের নেতাদের দুর্নীতি বন্ধ হবে । তাদের অহংকারী কথা বার্তা ও অশ্লীল ভাষা ব্যবহার বন্ধ হবে । যা ত্বরান্বিত করবে নুতন বাংলাদেশ গড়তে ।
আমাদের সমাজকে সংস্কারের জন্য যে সকল পদক্ষেপগুলো নেওয়া একান্ত প্রয়োজন তা হলো নিম্নরূপ:
(১) সাধারণ মানুষের মন-মানসিকতার পরিবর্তন:
নুতন বাংলাদেশ গড়ার জন্য, আমাদের প্রতিটি জনগণকে নিজ থেকেই বদলাতে হবে! নিজের বিবেকের কাছে নিজেকেই জবাব দিহি করতে হবে! নিজের ভুলের জন্য নিজেকে অনুতপ্ত হতে হবে ! যাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তাদের কাছে গিয়ে অন্যায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে । ওয়াদা করতে হবে যে, “যা অন্যায় করেছি, অনেক হয়েছে, আর নয়”, তবেই হবে দেশের সত্যিকারের সংস্কার। তা নাহলে সরকার যত সংস্কারই করুক না কেন, তার সুফল পাওয়া হবে অনেক কঠিন ব্যাপার।
(২). নৈতিক শিক্ষাকে উৎসাহিত করা:
আমরা যদি ভালো মানুষের সমাজ গড়ে তুলতে চাই, তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে — বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সমাজ, ইতিহাস ও প্রশাসন সম্পর্কিত সকল বিষয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি– সততা, ন্যায়পরায়নতা, মানবিকতা, নৈতিক মূল্যবোধ, দয়া ও আচার আচরণ সম্পর্কে শিক্ষামূলক বিষয়গুলো সকল লেভেলে (প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত) পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সকল শিক্ষাক্রমের সাথে সাথে নূতন প্রজন্মের মানবিক গুণাবলী, নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য, জাতির সঠিক ইতিহাসগুলো পাঠ কার্যক্রমের উপর জোর দিতে হবে । তাহলে তা আমাদের নুতন প্রজন্মের মাঝে মানবিকতা ও নৈতিকতার মূল্যবোধ বৃদ্ধি পাবে । একই সাথে তাদের ভেতর স্বার্থপরতা লোপ পাবে।
(৩). পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধকে উৎসাহিত করা:
আমাদের সন্তানদের, নুতন প্রজন্মের স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ গঠনে পরিবারগুলো বড়ো ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিটি বাবা-মাকে অল্প বয়স থেকেই তাদের সন্তানদের মধ্যে এই পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধগুলি শিক্ষা দিতে হবে । বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ড, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং স্থানীয় সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং সামাজিক সহযোগিতার কাজে অংশগ্রহণ করা, তা পরিবার থেকেই ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দিতে হবে । একই সাথে তাদেরকে এই সকল সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে তাদের ভেতর মানুষ ও সমাজের প্রতি সহমর্মিতা এবং পরোপকারী মনোভাব গড়ে উঠবে।
(৪). সমাজের সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখা:
একটি সমাজকে ও সমাজের মানুষকে ভালো রাখার জন্য, সেই সমাজে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখা একান্তই জরুরী । দীর্ঘদিন ধরে দলীয় ও ক্ষমতার প্রভাবে আমাদের অনেক সমাজে মাদকদ্রব্য বিক্রি, জুয়া সহ নানা ধরণের অনাচার চলে আসছে । যে সমাজে এই ধরণের অনাচার চালু আছে, সেই সমাজের মানুষের মাঝে তার খারাপ প্রভাব বিপুল ভাবে প্রভাবিত করে ! একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার জন্য, সেই সমাজে এই ধরণের মাদক ও অনাচার বন্ধ করতে হবে । এর জন্য সমাজের সবাই সম্মলিত ভাবে বাধা প্রদান করবে, প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতা নিবে । তবেই সমাজে সুস্থ পরিবেশ বজায় থাকবে।
(৫). বেকারত্ব দূরীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা:
আমাদের সমাজের দুর্নীতির একটি কারণ হলো বেকারত্ব ! নুতন বাংলাদেশ গড়ার জন্য সাধারণ জনগণের বেকার সমস্যা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে । এই ব্যাপারে সরকার, সামর্থ্যবান ব্যাক্তিবর্গ ও বড়ো বড়ো ব্যাবসায়ী প্রতিষ্টানকে এগিয়ে আসতে হবে । প্রতিটি প্রকল্পে যেন দেশের মানুষের কর্মের সংস্থান তৈরি হয়, সরকারকে সেটা অবস্যই খেয়াল রাখতে হবে । বর্তমান বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের গতানুগতিক শিক্ষা ব্যাবস্থার উন্নয়ন করতে হবে, এবং বিদেশে প্রতিটি জনগনকে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করে বিদেশে পাঠাতে হবে (যা করছে ফিলিপাইন, ইন্ডিয়া ও শ্রীলংকা)। একই সাথে সরকারকে, দেশের সামর্থ্যবান ব্যাক্তিবর্গকে, বড়ো বড়ো ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে, জনগণের মাঝে সুদবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সাধারণ জনগণকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য সহযোগিতা প্রদান করতে হবে । তবেই বাংলাদেশ থেকে বেকারত্ব কমে আসবে এবং এতে দুর্নীতির একটি বড়ো অংশ নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে।
(৬). সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা :
আমাদের সমাজের একটি বড়ো ব্যাধি হলো, ক্ষমতা ও অর্থের প্রভাবে সমাজে অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচার কার্যকলাপ চালানো । যার ক্ষমতা আছে, অর্থ আছে সে সমাজে বিভিন্ন অন্যায়, অত্যাচার ও জোর জুলুমের রাজত্ব কায়েম করে আসছে । ক্ষমতা আর অর্থের বিনিময়ে অনেক সামাজিক বিচারগুলো জুলুমবাজদের পক্ষেই যাচ্ছে । এই পরিস্থিতির কারণে, সমাজে বৈষম্য ও হতাশা তৈরি হয়েছে ! যার ফলে আজকাল শিক্ষিত ও সামর্থবান বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করছে না, তারা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেছে । যার কারণে সমাজে অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচার আরো বেশি বেড়ে গেছে । একটি সুন্দর সমাজ তৈরি করার জন্য সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা করতে হবে । তবেই একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে । এতে প্রতিটি গ্রামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে ।
(৭). সততার সঙ্গে নেতৃত্ব গড়ে তোলা:
একটি সুস্থ সমাজ গঠন করার জন্য দেশের “শিক্ষিত ও ভালো” মানুষদেরকে সমাজ ও দেশের কল্যানে নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি সমাজে “শিক্ষিত ও ভালো” মানুষকে সমাজ পরিচালনায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ তৈরি করতে হবে । সমাজে শিক্ষিত ও ভালো মানুষের নেতা তৈরি করার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে । নেতাদের মানবিক গুণাবলী, আচার আচরণ এবং মূল্যবোধ বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে পারে । একই সাথে এই সকল বিষয় নিয়ে ডিজিটাল ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান অব্যাহত রাখতে হবে । তবেই দুর্নীতিমুক্ত নেতা তৈরি হবে, যা এগিয়ে নিবে আগামী দিনের নুতন বাংলাদেশকে ।
(৮).নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের প্রচার করা:
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় সমাবেশ এবং জনসাধারণের আলোচনার মাধ্যমে মানুষের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধগুলি প্রচার করতে হবে । মানবিক মুল্যবোধ উন্নয়নের জন্য ভালো ভালো বই পড়তে হবে । প্রতিটি সমাজে একটি করে পাঠাগার গড়ে তোলা যেতে পারে। সেই সকল পাঠাগারে বাণিজ্য, বিজ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান, ইতিহাস সহ মানবিক মুল্যবোধ, নৈতিকতা, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কিত বই পাঠে সমাজের মানুষ মানবিক মূল্যবোধের গুণাবলী অর্জন করতে পারবে । ডিজিটাল ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং সমাজের গুণী ব্যাক্তিরা লিখনীর মাধ্যমে মানুষের দেশের মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
(৯). দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা:
দুর্নীতি বাংলাদেশের অগ্রগতির অন্যতম প্রধান বাঁধা । ভালো মানুষের সমাজ গড়তে হলে আমাদের অবশ্যই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করে, আইনি ব্যবস্থা এমন ভাবে গড়তে হবে যাতে সমাজ থেকে, বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি চিরতরে বিদায় নেয় । এই পরিবর্তন ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে থেকে শুরু করে, সকল পর্যায়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা প্রচার, দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাবগুলো প্রচারের জন্য সকল মিডিয়া প্ৰয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে । দেশের জনগণকে এক সাথে ওয়াদাবদ্ধ হতে হবে যে “আমরা নিজেরা দুর্নীতি করব না এবং অন্য কাউকে দুর্নীতি করতে দিব না”! তবেই দুর্নীতি বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিবে।
(১০) ওয়েলফেয়ার সোসাইটি গড়ে তোলা:
প্রতিটি সমাজে একটি করে ওয়েলফেয়ার সোসাইটি তৈরি করা যেতে পারে । যে সোসাইটিতে চাকুরিজীবি, ব্যাবসায়ী, কৃষক -শ্রমিক সকল স্তরের মানুষ থাকবে । তারা সবাই হাতে হাত রেখে ওয়াদা করবে, “আমরা সমাজের কল্যাণ, শান্তি, শৃংখলা ও সমৃদ্ধির জন্য একসাথে কাজ করব । আমরা সমাজে কোন ধরণের দুর্নীতি প্রশ্রয় দিব না “। তারা সমাজের মানুষের মৌলিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ,শিক্ষা ও চিকিৎসা) সমস্যার সমাধানের জন্য নিজ নিজ সামর্থ নিয়ে এগিয়ে আসবে । একই সাথে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রতিনিধির নিকটও নিজেদের সমাজের সমস্যা তুলে ধরবে এবং তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য কাজ করবে । সেই সকল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি সমাজের মানুষের মাঝে সেতুবন্ধন, বন্ধত্ব ও আন্তরিকতা বৃদ্ধির জন্য বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে ।
পরিশেষে বলবো, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমাদের সমাজের মানুষের ও দেশের নেতাদের মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয় এত নিচু পর্যায়ে চলে গেছে যে, সামাজিক সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা সময়ের ব্যাপার। তবে সমাজ সংস্কারের এই কাজগুলোও এখনই শুরু করতে হবে । তবেই একদিন এর সুফল আমরা দেখতে পাবো । তৈরি হবে আমাদের সকলের প্রত্যাশিত সুখী, সমৃদ্ধিশালী ও দুর্নীতিমুক্ত নুতন বাংলাদেশ ! যে বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়েছে ১৯৭১ সালে ও ২০২৪ সালের বাংলাদেশের আপামর ছাত্র – জনতা!
লেখক: কলামিস্ট ও গল্পকার
ইমেইল: farukahmed4083@gmail.com