নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এলাকায় গাছের ডালে ঝুলছিল ৪৫ বছর বয়সী নিহত আবু সালেহর নিথর দেহ। মাদকাসক্তির কারণে ভবঘুরে জীবন বেছে নেওয়া এই ব্যক্তি আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
গতকাল ২২শে জানুয়ারি (বুধবার) সকালে ঢাবি এলাকায় গাছের ওপরের দিকে একটি ডালে আবু সালেহর মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন পথচারীরা।
বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে তার মরদেহ শনাক্ত করেন ছোট দুই ভাই আবু হায়দার ছোটন ও মোহাম্মদ আলী।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চার ভাইয়ের মধ্যে বড় আবু সালেহ টেইলার্সে কাজ করতেন। কিন্তু বছর বিশেক আগে বাজে সঙ্গের কারণে গাঁজা, ইয়াবা থেকে শুরু করে প্যাথেডিনের মতো ভয়ংকর মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে মাদকের টাকা জোগাড় করতে তিনি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও চুরি করতেন। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।
ভাই মোহাম্মদ আলী জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার নগরকসবা গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জের নয়াবাড়ি এলাকায় বসবাস করছেন। সালেহ ছিলেন অবিবাহিত এবং টেইলার্সের কাজের পাশাপাশি মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়েন।
আবু সালেহর আসক্তি বাড়তে থাকলে তিন বছর আগে তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়ে পুরোপুরি ভবঘুরে জীবন বেছে নেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে দিন কাটাতেন। মাঝে মধ্যে বাড়িতে এসে মা-বাবা ও ভাইদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবার বেরিয়ে যেতেন। পাঁচ দিন আগেও তিনি বাড়িতে এসে মায়ের কাছ থেকে ওষুধ কেনার কথা বলে এক হাজার টাকা নিয়ে যান। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ভাই আবু হায়দার ছোটন জানান, সালেহ মাদকের কারণে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সাত-আট বছর আগে একবার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন, পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
পাঁচ বছর আগেও তিনি একবার গাছে উঠে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, তবে স্থানীয়রা দেখে তাকে উদ্ধার করেন। মাঝে মধ্যেই উদ্ভট আচরণ ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতেন তিনি।
ভাই মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তাকে সুস্থ জীবনে ফেরানোর জন্য। কিন্তু মাদকের নেশা তার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে। আজ তার এমন পরিণতি দেখে আমরা বাকরুদ্ধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও স্থানীয়দের অনেকে বলছেন, শহরের অলিগলিতে মাদকের ভয়াল ছোবলে বহু যুবকের জীবন ধ্বংস হচ্ছে, যা সমাজের জন্য এক অশনি সংকেত।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার পুলিশ জানায়, মরদেহের সুরতহাল শেষে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।