সেরা একাদশে যার থাকারই কথা ছিল না, সেই আফিদা খন্দকার চোখ জুড়ানো গোলে বেঁধে দিলেন সুর। তহুরা খাতুনের শুরু থেকে খেলা নিয়েও ছিল ঘোর অনিশ্চয়তা, তিনি উপহার দিলেন জোড়া গোল। তাতে উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত ও শিরোপাধারী বাংলাদেশের লড়াই প্রথমার্ধেই হয়ে গেল একপেশে। দ্বিতীয়ার্ধেও ছড়ি ঘুরিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে সেমি-ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ।
নেপালের কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বুধবার গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়বার ভারতের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। গত আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ভারতকে গ্রুপ পর্বে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল সাবিনারা।
সাফে বাংলাদেশের মেয়েরা অজেয় রইল সাত ম্যাচ ধরে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১-১ ড্র করে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কায় পড়া বাংলাদেশ অপরাজিত থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে হলো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। পাকিস্তানকে ৫-২ গোলে হারিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করা ভারত দুই ম্যাচে একটি করে জয় ও হারে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হলো।
দুই পরিবর্তন এনে ভারত ম্যাচের একাদশ সাজান বাটলার। রক্ষণে কোহাতির কিসকুর জায়গায় মাসুরা পারভীন ও মাঝমাঠে স্বপ্না রানীর জায়গায় মনিকা চাকমার সাথে ‘জুটি’ বাঁধেন মারিয়া মান্দা। ভারত ম্যাচে মারিয়াকে পাশে চাওয়ার কথা মনিকা বলার পর এবং কোচের কিছু মন্তব্যে প্রকাশ্যে আসতে থাকে দলের অন্তঃকোন্দল।
আগের দিন সেরা একাদশে সব ‘সিনিয়র’কে খেলানোর কথা বললেও পরে মন বদলান কোচ বাটলার। গতবারের সাফ জয়ী নিলুফা আক্তার নীলাকে না নামিয়ে আফিদা খন্দকারকে রাখেন শুরু থেকে। পাকিস্তান অধিনায়কের সঙ্গে সংঘর্ষে চোখের ওপরে কেঁটে গেলেও শামসুন্নাহার জুনিয়র ওই ম্যাচে পুরোটা সময় খেলেন, ভারতের বিপক্ষেও নামেন শুরুতে।
পঞ্চম মিনিটেই দারুণ সুযোগ কড়া নাড়ে শামসুন্নাহার জুনিয়রের দুয়ারে, বাম দিক থেকে ঋতুপর্না চাকমার বাড়ানো অসাধারণ ক্রসের নাগাল যদিও পাননি এই ফরোয়ার্ড।
শুরু থেকে বেশিরভাগ সময় পজেশন ধরে রাখা বাংলাদেশ দশম মিনিটে হঠাৎ বিপদে পড়তে বসেছিল। আফিদার ব্যাকপাস ক্লিয়ার করতে বিলম্ব করেন গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। সেই সুযোগে ছুটে যান ভারতের ফরোয়ার্ড মনিষা। বিপদ বুঝে রূপনা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন, বল মনিষার বাড়ানো পায়ে লেগে পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
১৮তম মিনিটে আফিদার দৃষ্টিনন্দন গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সাবিনার কর্নার প্রতিহত হওয়ার পর বল পেয়ে যান প্রথমবারের মতো সাফে খেলতে আসা আফিদা। নিখুঁত শটে লাফিয়ে ওঠা গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জাল খুঁজে নেন এই ডিফেন্ডার। জাতীয় দলের জার্সিতে আফিদার প্রথম গোল।
ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত ২৬তম মিনিটে। বাঁ দিক দিয়ে দ্রুত বক্সে ঢুকে শট নেন ঋতুপর্না, বল পোস্টে লেগে চলে যায় মনিকা চাকমার দিকে; প্রাণপণ চেষ্টা করেও পাল্টা শট নিতে পারেননি এই মিডফিল্ডার।
তিন মিনিট পর আবারও গোলের উচ্ছ্বাসে ভাসে বাংলাদেশ। সাবিনা ও শামসুন্নাহার দারুণ আক্রমণ শাণালেও ফিনিশিং দিতে পারেননি। সেই আক্রমণ থেকে্ই ঋতুপর্ণা ক্রস বাড়ান, দূরের পোস্টে তহুরা বুক দিয়ে বল ঠেলে দেন জালে। শঙ্কার মেঘ সরে যেতে থাকে বাংলাদেশের আকাশ থেকে।
৩৫তম মিনিটে রূপনার দুর্দান্ত সেভে ব্যবধান কমাতে পারেনি ভারত। বাম প্রান্ত থেকে চানু সরোকাইবামের ক্রস গোলমুখে ফাঁকায় পেয়ে যান বালা দেবি, কিন্তু তার শট আটকে দেন রূপনা। একটু পর ভাগ্যের ছোঁয়া পায় বাংলাদেশও; মনিষার ফ্রি কিক পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়।
৪২তম মিনিটে শট নেওয়ার সুযোগ ছিল না শামসুন্নাহার জুনিয়রের সামনে, কিন্তু তিনি বল বাড়ান বক্সের বাইরে তহুরাকে। দৃষ্টিনন্দন কোনাকুনি শটে স্কোরলাইন ৩-০ করেন এই ফরোয়ার্ড।
পরের মিনিটেই ব্যবধান কমিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখে ভারত। রূপনা লাফিয়ে বলের নাগাল পেলেও গ্লাভসে জমাতে পারেননি। আলগা বল হেডে জালে পাঠান বালা দেবি।
দ্বিতীয়ার্ধে ভারত মরিয়া হয়ে ওঠে, শান্ত থেকে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। পোস্টের নিচে পাহাড়সম দৃঢ়তা নিয়ে ছিলেন গোলরক্ষক। ৫৫তম মিনিটে রিমপা হালদারের শট ঝাঁপিয়ে আটকান গত আসরের সেরা গোলরক্ষক রূপনা। তিন মিনিট পর মারিয়াকে তুলে স্বপ্না রানীকে নামান বাটলার।
পোস্টে রূপনার আধিপত্যের দেখা আবারও মেলে ৬২তম মিনিটে, এবার জয়তি চৌহানের জোরাল শট ফিস্ট করে ফেরান তিনি।
৮০তম মিনিটে স্বপ্না রানীর শট কোনোমতে আঙুলের টোকায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে বের করে দেন ভারত গোলরক্ষক। একটু পর তহুরাকে তুলে কৃষ্ণাকে নামান কোচ।
ম্যাচের লাগাম মুঠোয় রেখে তখন শেষের বাঁশির অপেক্ষায় মেয়েরা। তা বাজতেই সব শঙ্কা, সমালোচনা পেছনে ফেলে বাঁধনহারা উল্লাসে মেতে ওঠেন সাবিনা-কৃষ্ণা-আফিদারা। সূত্র: বিডি নিউজ