একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে নাকাল দেশবাসী। তার মধ্যেই নতুন দুঃসংবাদ। বঙ্গোপসাগরের গভীরে নিম্নচাপটি রূপ নিয়েছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে। ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এটি। উপকূলবাসী তো বটেই, দেশজুড়ে সবার কপালে চিন্তার ভাজ। মনে প্রশ্ন জাগছে, কতটা শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়? ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাই বা কতটুকু? সদ্য বন্যা আক্রান্ত একটি দেশ কি সামলে ওঠতে পারবে প্রলয়ঙ্করী দানার ধাক্কা?
‘দানা’ নিয়ে কী বলছে আবহাওয়া অধিদফতর?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ওড়িশার পুরী, পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ এবং বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলে সরাসরি আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানা যায়, বুধবার ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে মাত্র ছয় থেকে সাতশ কিলোমিটার দূরে ছিলো দানা। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত। কাছাকাছি সাগরেও রয়েছে উত্তাল ঢেউ।
এরইমধ্যে দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে দানার প্রভাব। সকাল থেকেই মেঘ জমতে শুরু করেছে বঙ্গোপসাগরের আকাশে। উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌ যোগাযোগ। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা দিতে পারে ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টি। পরিস্থিতি হতে পারে আরও সঙ্গিন।
পরিণত হতে পারে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে
ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত, ভারতের ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অতিক্রম করবে দানা। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার। ঝড়ের প্রভাবে রাজ্যের ৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এরমধ্যেই এ অঞ্চলের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চারদিনের ছুটি ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিতে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরে দেখানো হচ্ছে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত। উত্তর বঙ্গোপসাগরে থাকা সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা দিতে পারে জলোচ্ছ্বাস।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে কারা?
ঘূর্ণিঝড়ের দানা নামটি কাতারের দেয়া। তবে কেন বা কীভাবে এ নামকরণে ভূমিকা রাখলো কাতার?
প্রথমেই সদস্যদেশগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা নেয় পাঁচটি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থা। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে সংক্ষিপ্ত তালিকা পাঠানো হয় আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনে। পরে এ সংস্থাই নামগুলো ঠিক করে দেয়।
মূল সংস্থার কাছে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা পাঠায় এসকাপ প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস। সদস্য দেশের তালিকায় আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ধেয়ে আসা দানা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। মূল আঘাত ভারতের দিকে অনুমান করা হলেও, যে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ বদলে যেতে পারে। এমন কিছু হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোথায় গিয়ে পৌঁছুবে তা অনুমান করাও কষ্টসাধ্য।
ব্যাপক প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলার লক্ষ্যে উপকূলীয় জেলার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সঙ্গে আলোচনা এবং সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ‘দানা’ দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী অনুযায়ী, ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন উপকূলীয় জেলার ডিসিরা।
বুধবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেনের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার জেলা প্রশাসকরা স্ব-স্ব সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করেছেন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিপিপি ও রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবকদের। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগাম যেসব কার্যক্রম নেয়া দরকার সেগুলো নেয়া হয়েছে।
এরইমধ্যে উপজেলা প্রশাসনকে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।