রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ‘পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও দেশবিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে’ ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে একদল লোক একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে যায়। সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আগুন দেওয়া হয়। দুই পক্ষই দাবি করেছে, তাদের ওপর আগে হামলা হয়েছে।
‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মশালমিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। মিছিলটি শাহবাগ হয়ে বিজয়নগরে যায়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক বলেন, তাঁরা আগামী শনিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে সমাবেশ করতে পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছেন। আজ জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যার পরে শাহবাগ থেকে একটি মশালমিছিল নিয়ে একদল লোক কার্যালয়ে হামলা করে।
মুজিবুল হক বলেন, কর্মীদের প্রতিরোধে হামলাকারীরা মার খেয়ে পালিয়ে যায়। আধা ঘণ্টা পর সংঘবদ্ধ হয়ে ফিরে তারা কার্যালয়ে আগুন দেয়। তিনি আরও বলেন, আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস এসেছিল। তাদের আগুন নেভাতে দেওয়া হয়নি। মুজিবুল হক বলেন, ‘এভাবে যদি একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলা হয়, তাহলে দেশে কিসের গণতন্ত্র, কিসের রাজনীতি।’
ঘটনা সম্পর্কে নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন ঘটনাস্থলে বলেন, ‘শাহবাগে সমাবেশ শেষ করে আমরা বিজয়নগরে আসি। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।’
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সন্ধ্যা সাতটার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, ‘জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’
এর কিছুক্ষণ পর হাসনাত আবদুল্লাহ আরেকটি পোস্টে লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে রাত সাড়ে আটটায় মিছিল নিয়ে তাঁরা বিজয়নগরে যাবেন। ‘জাতীয় বেইমানদের’ নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সারজিস আলম সাড়ে সাতটার দিকে একই রকম একটি পোস্ট দেন। তিনি লিখেছেন, ‘রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে আমরা বিজয়নগরে যাচ্ছি।’
রাত সোয়া আটটার পরে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের নিচতলায় আগুন দেওয়া হয়েছিল। তা নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তখনো ভাঙচুর চলছিল। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে টহল দিয়ে যায়। এ ছাড়া পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে।
পরে রাত ৯টার দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য এবং সেনা সদস্যরা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে আসেন। তাঁরা হামলাকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আধা ঘণ্টার মধ্যে ওই কার্যালয়ের সামনে থেকে হামলাকারীদের সরিয়ে দেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। এরপর থেকে তাঁরা কার্যালয়টি ঘিরে রেখেছেন। কার্যালয়ের কাছে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। হামলাকারীর সামনের সড়কের একপাশে অস্থান নিয়ে নানা শ্লোগান দিচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন
ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে খবর পেয়ে সেখানে আগুন নেভানোর জন্য দুই ইউনিট পাঠানো হয়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “আমাদের সাথে তারা যা করছে, এ ঘটনা সারা দেশের মানুষ দেখতেছে। একদম প্রকাশ্যে, লাইভ চলতেছে ফেসবুকে-মিডিয়াগুলোতে। আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।” রাত ৮টায় রমনা বিভাগের এডিসি জুয়েল রানা বলেন, “আমরা এখানেই আছি। ছাত্র-জনতা এসে জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন দিয়েছে। এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখানে এখনো অনেক ছাত্র-জনতা ভিড় করে রয়েছে।”
তিনি বলেন, “এখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমরা এখানে আছি।”
শেখ হাসিনার পতনের পর ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেয়ার শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করার পর নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার তিনটি সংলাপে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আপত্তির পর ১৯ অক্টোবরের চতুর্থ দফার সংলাপে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি।
২০০৮ সাল থেকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করে মোট চারটি নির্বাচন করেছে। দলটির নেতারা কখনও মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরকারের অংশীদার হয়েছেন, কখনও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সমর্থন দিলেও সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টি তার অতীতের কারণে হোঁচট খাচ্ছে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ৭ অক্টোবর রাতে ফেইসবুক পোস্টে লেখেছিলেন, “স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলে আমরা সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর বিরোধিতা করব।” সূত্র: প্রথম আলো ও বিডি নিউজ২৪ডটকম