মানবজাতির একটি মহৎ গুণ হচ্ছে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করলে তিনি খুশি হন। মনে রাখতে হবে, সৎপথ পাওয়া মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। আর এ সৎপথ পাওয়ার জন্য ধৈর্য দরকার। ধৈর্য শক্তি মানুষের জন্য সৎকাজের সুযোগ ও ক্ষেত্র সৃষ্টি করে।
ইসলামে ধৈর্যের প্রতি সীমাহীন গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় সৃষ্টি মানব জাতিকে ধৈর্যধারণের নির্দেশ দিয়ে কোরআনের বহু আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। তিনি পবিত্র কোরআনের ৯০টিরও বেশি স্থানে ধৈর্যের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা!
তোমরা ধৈর্যধারণ করো, ধৈর্যধারণে পরস্পর প্রতিযোগিতা করো এবং ধৈর্য সহকারে পরস্পরকে শক্তিশালী করো। আর আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা আলে ইমরান ২০০)
ইবাদতে আল্লাহর আনুগত্যের ওপর ধৈর্য হলো সর্বোচ্চ ধৈর্যধারণ। এই প্রকারের ধৈর্যের ওপর আমল করার জন্য আল্লাহতায়ালা কোরআনে অসংখ্যবার আদেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি তার ইবাদত করুণ এবং তাতে ধৈর্যধারণ করুণ, তথা সুদৃঢ় থাকুন।’ (সুরা মারইয়াম ৬৫) কোরআনের এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা ‘ওয়াসতাবির’ শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা ধৈর্যের সর্বোচ্চ স্তরকে বোঝায়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহর আনুগত্যের ওপর ধৈর্যধারণ করতে আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আপনি আপনার পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায় করতে আদেশ করুন এবং তাতে ধৈর্যধারণ করতে বলুন।’ (সুরা তাহা ১৩২)
ধৈর্য মানুষের জন্য কল্যাণকর : মানুষ সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করলে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হয়। কেননা ধৈর্য মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর যদি ধৈর্যধারণ করো, তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।
আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’ (সুরা নিসা ২৫) একজন মুমিনের ওপর আপতিত বিপদসমূহ তার জন্য কল্যাণই বয়ে আনে। এতে করে তার গুনাহসমূহ দূর হয়ে যায়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিমের ওপর কোনো যন্ত্রণা, রোগ-ব্যাধি বা এ ধরনের কোনো বিপদ আপতিত হলে, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে ঝরিয়ে দেন, যেভাবে গাছ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে ফেলে।’ (সহিহ্ বুখারি)
হাসান বাসরি (রা.) বলেছেন, ‘ধৈর্য হলো কল্যাণের ভাণ্ডারসমূহের অন্যতম। আল্লাহতায়ালা কেবল তার বান্দাকেই তা প্রদান করে থাকেন।’ হাসান (রা.) বলেন, ‘ধৈর্য প্রভূত কল্যাণের চাবিকাঠি। কেবল মহৎ ও মহানুভব ব্যক্তির হাতেই আল্লাহ এই চাবিগুচ্ছ অর্পণ করেন।’
ধৈর্য সাফল্যের চাবিকাঠি : মানুষের ওপর আপতিত বিপদকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে মোকাবিলা করলে আল্লাহতায়ালা তাকে ওই কাজে সফলতা দান করেন। এ কারণে ধৈর্যকে যেকোনো সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করা হয়। পক্ষান্তরে অধৈর্য হয়ে পড়লে ওই কাজে সফল হওয়া যায় না।
এজন্য আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতএব তুমি উত্তমরূপে ধৈর্যধারণ করো।’ (সুরা মাআরিজ ৫) তবেই সফলতার পথ খুঁজে পাবে, দুঃখ-যন্ত্রণার পথ থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাই বিপদাপদে ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করতে চায়, আল্লাহতায়ালা তাকে ধৈর্যধারণ করার শক্তি দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে অধিক কল্যাণকর ও প্রশস্ততর সম্পদ আর কাউকে দান করা হয়নি।’ (সহিহ মুসলিম)
ঈমানের পূর্ণতা লাভ : ধৈর্য ঈমানের মূল। কারণ সর্বোত্তম নেকি হচ্ছে তাকওয়া। যা ধৈর্যের মাধ্যমে অর্জিত হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ধৈর্য ঈমানের অর্ধাংশ।’ (সহিহ বুখারি) আলী (রা.) বলেছেন, ‘ঈমানের সঙ্গে ধৈর্যের সম্পর্ক হলো শরীরের সঙ্গে মাথার সম্পর্কের মতো। মাথা ছাড়া শরীর অর্থহীন।’ এরপর তিনি উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘শুনে রাখো, ধৈর্য ছাড়া ঈমান অপূর্ণাঙ্গ।’ বস্তুত ধৈর্য মানুষের মধ্যে এমন বহু আত্মিক ও নৈতিক গুণের বিকাশ সাধন করে, যা ছাড়া ঈমানের দাবি পূরণ হয় না।