মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গুলি করে প্রেমিকা সাহিদা ইসলাম রাফা (২৪) হত্যার ঘটনায় প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে (৩০) সোমবার ভোরে ভোলার ইলিশা থেকে গ্রেফতার এবং তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের তারানগরের একটি নালা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল এবং সড়কের পাশের জঙ্গল থেকে রক্তমাখা ভেনেটি ব্যাগ জব্দ করেছে ডিবি পুলিশ। এর আগে শনিবার সকালে শ্রীনগরের দোগাছি এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেনে গুলি করে হত্যা করে সাহিদাকে। হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি তৌহিদ গত ৫ আগস্ট ওয়ারী থানা থেকে লুট করেছিল বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
রাফি ও তৌহিদ রাতে ঢাকার ওয়ারী থেকে বেরিয়ে মাওয়ায় ঘুরতে আসে। ভোরে দুজনের মধ্যে ঝগড়া বাধে। বেশ কিছু দিন ধরে তাদের প্রেমের স¤পর্ক ছিল। পুলিশের কাছে হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছে তৌহিদ।
এর আগে শনিবার সকালে এই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় স্বজনরা মরদেহ সনাক্ত করে। পরে রবিবার রাফার মা জরিনা খাতুন বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় হত্যা মামলা রুজু করে।
মুন্সীগঞ্জ ডিবি পুলিশের এস আই মো. আজাদ জানান, আসামীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পিস্তল ছাড়াও সড়কের পাশেল একটি জঙ্গল থেকে রাফার রক্ত মাখা ভেনেটি ব্যাগটি উদ্ধার করা হয়।
ময়নাতদন্তের পর রবিবার দিবাগত মধ্য রাতে রাফাকে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ির বরিযান সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জরিনা খাতুন জানান, তার মেয়ে ওয়ারীর একটি বাসায় বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেয়ার কাজ করতেন। আর তৌহিদ গাঁজার ব্যবসার করতো বলে তিনি জানান।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ইন্সপেক্টর ইশতিয়াক আশফাক জানান, ওয়ারী থানা থেকে গত ৫ আগস্ট লুট করা অস্ত্র ব্যবহার করে ওই নারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তৌহিদকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই ডিবি কর্মকর্তা বলেন, তৗহিদ কৌশলে মাওয়ার এনে তাকে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ফেলে রাখে। গ্রেপ্তার তৌহিদ শেখ তন্ময় রাজধানী ঢাকার ওয়ারীর বনগ্রাম এলাকার প্রয়াত শফিক শাহর ছেলে। নিহত তরুণীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তৌহিদ কৌশলে সাহিদার সঙ্গে প্রেমের স¤পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। আর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় শাহিদাকে হত্যা করেন তৌহিদ।
লাশের পাশে ৫টি গুলির খোসা পড়ে ছিল। তার শরীরে আটটি গুলির ছিদ্র ছিল। শাহিদা ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার বেগুনবাড়ির বরিবয়ান এলাকার আব্দুল মোতালেবের মেয়ে। তিনি ঢাকার ওয়ারী এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।
মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. আজাদ জানান, সন্দেহভাজন হিসেবে তৌহিদকে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের একাধিক দল কাজ করছিল। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রোববার রাতে গাড়ি যোগে একটি দল ভোলায় যায়। আর তৌহিদ সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে ভোলায় যাচ্ছিল। পদ্মা সেতু ব্যবহার করে দ্রæত লঞ্চের আগেই ভেলায় পৌছে যায় পুলিশের এই টিম। তৌহিদ আত্ম মনপুরায় আত্মগোপনে যাচ্ছিল। লঞ্চটি ভোরে ইলিশায় ভিড়তেই গ্রেফতার করে তৌহিদকে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এসআই মো. আজাদ বলেন, তৌহিদের সঙ্গে সাহিদার দীর্ঘদিনের প্রেমের স¤পর্ক ছিল। এর মধ্যে তৌহিদ অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিষয়টি শাহিদা জানতে পারেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে একাধিকবার ঝগড়া হয়। গত শুক্রবার রাতে শাহিদাকে মুঠোফোনে ওয়ারীর বাড়ি থেকে মাওয়ায় ইলিশ খাওয়ার কথা বলে ডেকে আনেন তৌহিদ। শাহিদাকে নিয়ে তিনি রাতভর এক্সপ্রেসওয়েতে ঘোরাঘুরি করেন। শনিবার ভোরে তাঁরা শ্রীনগর দোগাছি এলাকায় হাঁটাহাঁটি করেন। এ সময় শাহিদা কথা প্রসঙ্গে তৌহিদকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। তৌহিদ বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগিবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে তৌহিদ পিস্তল দিয়ে শাহিদাকে গুলি করেন। পরে সেখান থেকে তিনি পালিয়ে যান।
সাহিদার মা জরিনা খাতুন বলেন, তিন মাস আগে শাহিদা ও তৌহিদ সবার অজান্তে চাঁদপুরে ঘুরতে গিয়েছিল। সেখানে তৌহিদ আমার মেয়েকে মারধর করে। পরে পুলিশ এসে দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে দুজনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে তৌহিদের পরিবারের লোকজন। তখন তাঁদের মধ্যে প্রেমের বিষয়টি আমি জানতে পারি। পরে তৌহিদের বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিই। জানতে পারি, তৌহিদ গাঁজা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ছেলে হিসেবেও ভালো না। আমার মেয়েকে ওই ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তৌহিদ বিভিন্ন সময় আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যেত। মেয়েকে বাড়ি থেকে বের হতে দিতাম না। এরপরও সাহিদাকে ফুসলিয়ে ফোন করে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গেছে। আমার মেয়েটাকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।