মুফতী সাঈদ আহমাদ খান নদভী
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, সুবিশাল এই ধরণী তটে তাউহীদের সুবিমল জ্যোতি নিভিয়ে দিতে, সূচনালগ্ন থেকেই মালাউন কুফ্ফারদের ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়! কালের পরিক্রমায় আপন লক্ষ্য-বস্তু স্থির রেখে অপতৎপরতার কুটির জাল তারা ক্রমাগত বুনেই চলেছে। বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিধন অব্যাহত রাখতে, শান্তি- মিশন নামে গড়ে তুলেছে ফ্যাসিবাদ সহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অনেক শয়তানী সংগঠন।
এরই ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশে হিন্দুত্ববাদের আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে ইসকন। Iskcon শব্দটি ইংরেজীর সংক্ষিপ্ত রূপ। বাংলায় যার অর্থ ‘আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ’। অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ নামক এক সন্ন্যাসী ইসকন প্রতিষ্ঠা করেন। যিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত কলকাতার বাসিন্দা। জনসেবা শিক্ষা, ধর্মচর্চা ও বিকৃত আধ্যাত্মচর্চা করার গোপন উদ্দেশ্যে ১৯৬৬ সালের ১৩ জুলাই আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে এই সন্ত্রাসী সংগঠন সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করে।
ইসকন প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে গুম, খুন ও অপহরণ সহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকায় সৌদি আরব, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, ইরান ও ইন্দোনেশিয়ায় ইসকন নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও তুর্কমেনিস্তান সহ আরো পাঁচটি দেশে তাদের কার্যক্রম কঠোর নজরদারীর আওতাধীন রয়েছে।
ইসকনের গোপন আরেকটি পরিচয় হলো তারা ‘র’- এর এজেন্ড। যারা ধর্মচর্চা ও জনসেবার আড়ালে অখণ্ড হিন্দুরাজ্য ও হিন্দুভারত তৈরীর লক্ষ্যে বাংলার মাটিতে হিন্দুত্ববাদের শিরকের বীজ বপনে বদ্ধপরিকর!
ভারত এখন সেকুলার রাষ্ট্র। তাদের টার্গেট হলো অল্প কয়েক বছরেই তারা তাদের রাষ্ট্রকে হিন্দুরাজ্যে পরিণত করবে। এবং এশিয়ার পরাশক্তিরূপে আপতিত হবে। যেখানে মুসলিমদের কোনো অধিকার থাকবে না।
এর জন্য দরকার হলে তারা ব্যাপকহারে মুসলিম নিধন করবে। ভারত থেকে মুসলিমদেরকে তাড়িয়ে দেবে। এবং বাংলাদেশকে দখল করবে। অলরেডি তারা বহুপূর্ব থেকেই এই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। বাংলাদেশের চিটাগাং ও পার্বত্য অঞ্চল থেকে শুরু হয়েছে এর প্রথম মিশন।
সম্প্রতি রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবি শহীদ আলিফকে প্রকাশ্যে জবাই করে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি জানান দিয়েছে। এরূপ সহিংসতার মাধ্যমে সমগ্র দেশকে অগ্নিগর্ভ করে, ক্রমশঃ বৃহত্তর সংঘাত টেনে আনার পায়তারা চালাচ্ছে তারা।
ইসকনের মূল চেতনা, মৌলিক শ্লোগানঃ
“নির্যন করো আজি সকল ভূবন”- যার অর্থ, সারা পৃথিবীকে (যবন বা) মুসলমান মুক্ত করো।
ইসকন আসলে কী?
ইসকন হচ্ছে, একটি জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী সংগঠন। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনা সংঘ। ইসকন ২০১৭ সালের ১১ জুলাই থেকে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করেছে। ফুড ফর লাইফ কর্মসূচির আওতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা উপলক্ষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষার্থীদের মাঝে হিন্দুত্ববাদির শ্লোগান দিয়ে কৃষ্ণ প্রসাদ বিতরণ করে ওরা। ইসকন কর্মীদের শেখানো মতে, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ মন্ত্র পাঠ করে এ প্রসাদ গ্রহণ করে।
ইসকনের অন্যতম টার্গেট:
ইসকনের অন্যতম টার্গেট হলো বাংলাদেশে সনাতন মন্দিরগুলো দখল করা। সনাতনী নাম ব্যবহার করে এই দেশের মানুষকে ধর্মহীনতা ও নাস্তিকতার দাওয়াত দেওয়া। ধর্মে ধর্মে বিভেদ বাঁধিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। এবং বাংলাদেশ সহ আশপাশের রাষ্ট্রগুলো নিয়ে রামরাজ্য নামে ধর্মহীনতার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। যাতে এশিয়ার পরাশক্তি হতে পারে বিধর্মীরা।
চট্টগ্রাম ও ইস্কন
বাংলাদেশের ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, পার্বত্য অঞ্চল সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ইসকনের কেন্দ্র রয়েছে। এর মাঝে চট্টগ্রামে ইসকনের অনেকগুলো আস্তানা আছে। চট্টগ্রামের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে দখল করতে চায়। এই জন্যই তারা চট্টগ্রামকে ‘হিন্দুদেশ’ বলে অলরেডি প্রচার শুরু করে দিয়েছে! চট্টগ্রামে তাদের কিছু আস্তানার নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১। শ্রী শ্রী পুন্ডরীক ধাম
গ্রাম: মেখল, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
২। ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির
ডাক: মেডিকেল, পাচলাইশ, চট্টগ্রাম।
৩। শ্রী শ্রী নন্দনকানন
১নং-গলি চট্টগ্রাম।
৪। শ্রী শ্রী রাধা গিরিধারী মন্দির
নতুন ব্রিজ সংলগ্ন, কালাঘাটা, বান্দরবান পার্বত্য
৫। শ্রী শ্রী রাধা দামোদর মন্দির,
কৃষ্ণানন্দ ধামরোড, ঘোনারপাড়া, কক্সবাজার,
৬। শ্রী শ্রী রাধা বংশীধারী মন্দির সহদেবপুর, ফেনী।
৬। শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির
ইসকনের কেন্দ্র ও উদ্দেশ্য
বাংলাদেশে ইসকনের একটি প্রধান কেন্দ্র বা মন্দির রয়েছে। যা ঢাকা শহরে অবস্থিত। এটি নয়াপল্টনে অবস্থিত।
এছাড়া ইসকন বাংলাদেশের সদরদপ্তর বা হেড অফিস ঢাকা শহরের মহাখালী এলাকায় অবস্থিত। এর ঠিকানা হলো: ইসকন সদরদপ্তর, ৮/১ ও ৮/২ স্বপন প্লাজা, বীর উত্তম মির শরণি, মহাখালী। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারে: +৮৮ ০২-৯১২২৫২৩
ইসকনের সদস্যরা বাংলা ভাষায় বই লিখে থাকেন এবং কৃষ্ণচেতনার প্রচার-প্রসার করে থাকেন।
২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ইসকনের ৫০০০০ টিরও বেশি মন্দির এবং কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি খামার সংগঠন (কয়েকটি স্বনিযুক্তি প্রকল্প সহ), ৫৪টি বিদ্যালয় ও ৯০টি ভোজনালয়। বর্তমানে পূর্ব ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্য এশিয়ায় ও ভারত উপমহাদেশে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। (উইকিপিডিয়া)।
বাংলাদেশকে নিয়ে ইসকনের দূরভিসন্ধি
ইসকন আসলে হিন্দুদের কোনো সংগঠন নয়, হিন্দুবেশধারী ইহুদীদের একটি সংগঠন। কর্নেল আবু রুশদের লেখা ‘বাংলাদেশে র’- যাতে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা উল্লেখ আছে- সেখানে লেখা হয়েছে,
‘ইসকন নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে। এর সদর দফতর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। মূলতঃ এটা ইহুদীদের একটি সংগঠন বলে জানা গেছে। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উস্কানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি।”(বই- বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা- বাংলাদেশে ‘র’ পৃষ্ঠা: ১৭১)
আপনাদের জেনে রাখা দরকার, ইসকনের সৃষ্টি কিন্তু ভারতে নয় আমেরিকার নিউইয়র্কে। মাত্র ৫০ বছর আগে, ১৯৬৬ সালে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতার নাম ‘অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ’। অবাক হওয়ার বিষয়, এ ব্যক্তি ভারতে কোনো হিন্দু শিক্ষালয়ে লেখাপড়া করেনি, লেখাপড়া করেছে খ্রিস্টানদের চার্চে। পেশায় সে ছিলো ফার্মাসিউটিকাল ব্যবসায়ী, কিন্তু হঠাৎ তার মাথায় কেনো হিন্দু ধর্মের নতুন সংস্করণের ভুত চাপলো, কিংবা কোন শিক্ষাবলে চাপলো তা সত্যিই চিন্তার বিষয়! স্বামী প্রভুপাদ নতুন ধরনের হিন্দু সংগঠন চালু করতে প্রথমেই তাতে বাধা দিয়েছিলো মূল ধারার সনাতন হিন্দুরা।
অধিকাংশ হিন্দুই তার বিরুদ্ধচারণ শুরু করে। কিন্তু সেই সময় স্বামী প্রভুপাদের পাশে এসে দাড়ায় জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স, ল্যারি শিন ও টমাস হপকিন্স-এর মত চিহ্নিত ইহুদী- খ্রিস্টান এজেন্টরা।
উল্লেখ্য- এ সংগঠনটি হিন্দুদের অধিকাংশ বেসিক কনসেপ্ট স্বীকার করে না। তারা হিন্দুদের উপর সম্পূর্ণ নিজস্ব কনসেপ্ট চাপিয়ে দেয়।
এদের চেনার সহজ উপায়:
এরা সব সময় ইউরোপীয় সাদা চামড়াদের সামনে নিয়ে আসে। সংগঠনটি মূলত এনজিও টাইপ। এরা সাধারণত হলুদ কাপড় পরে থাকে। হাতে ফিতা বাঁধে। অনেকে কপালে বিশেষ চিহ্ন ও রং ব্যবহার করে। এরা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের দলে ভিড়িয়ে দল ভারি করে। এ কারণে তাদের আস্তানাগুলো হয় নিম্নবর্ণের হিন্দুদের আস্তানার পাশে। যেমন, ঢাকা শহরে স্বামীবাগ মন্দিরের পাশে ইসকন মন্দির হওয়ার কারণ, স্বামীবাগে রয়েছে বিশাল মেথর পট্টি। এই মেথর পট্টির নিচুবর্ণের হিন্দুদের নিয়ে তারা দল ভারি করে। সিলেটেও ইসকনদের প্রভাব বেশি। কারণ চা শ্রমিকদের একটি বিরাট অংশ নিচু বর্ণের হিন্দু। এদেরকে দলে নিয়ে সহজে কাজ করে তারা।
এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন দরিদ্র পরিবারের শিশুদেরকে ধর্মান্তর করার চেষ্টা চালায়। ছোটো ছোটো ছাত্রছাত্রী ও বাচ্চাদেরকে প্রসাদ বিতরণ করে। যেই অবুঝ বাচ্চাদেরকে এই প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে এবং হরে কৃষ্ণ হরে রাম ও জয় শ্রীরাম শ্লোগান দেওয়া হয়েছে এদের মধ্যে কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রী ছিলো কিনা নিশ্চিত হতে না পারলেও এদের বেশিরভাগ মুসলিম পরিবারের সন্তান, এতটুকু নিশ্চিত জানা গেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইসকনদের প্রভাব ঢুকে পড়েছে। এরা চা শ্রমিক ও মেথরদের একটি বিরাট অংশ নিয়ে সহজে কাজ করে। যাদের ইশারায় এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা দরকার।
লেখক ও কলামিস্ট, মুফতি ও মুহাদ্দিস, দেওভোগ বড় মাদরাসা,মুন্সীগঞ্জ