রাতের আকাশে দেখা যাবে বিরল এক দৃশ্য। আজ বৃহস্পতিবার ১৩ ও আগামীকাল শুক্রবার ১৪ মার্চ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হবে। এ সময় গাঢ় তাম্রবর্ণ ধারণ করবে চাঁদ। একে বলা হচ্ছে ‘ব্লাড মুন’ বা ‘রক্তিম চাঁদ’। তবে পৃথিবীর সব স্থান নয়, এবারের চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে শুধু পশ্চিম গোলার্ধ থেকে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক চন্দ্রগ্রহণ কী, আসন্ন গ্রহণের সময় কেন চাঁদ রক্তবর্ণ ধারণ করবে, কারা কারা চাঁদের এই রূপ দেখতে পাবেন, আর এ ঘটনা কতটা বিরল।
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ কী
পৃথিবী যখন চাঁদ ও সূর্যের ঠিক মাঝামাঝিতে অবস্থান করে, তখন সূর্যের আলো চাঁদে পৌঁছানোর আগে পৃথিবীর ওপর বাধা পায় এবং পৃথিবীর ছায়া পড়ে চাঁদের পৃষ্ঠের ওপর, এ সময় চন্দ্রগ্রহণ হয়। এই চন্দ্রগ্রহণের প্রধানত তিনটি ধরন রয়েছে। সেগুলো হলো—
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ: এই চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ার আড়ালে চলে যায়। এ সময় চাঁদ লালচে রং ধারণ করে।
আংশিক চন্দ্রগ্রহণ: চাঁদের একটি অংশের ওপর যখন পৃথিবীর ছায়া পড়ে, তখন আংশিক চন্দ্রগ্রহণ হয়। চাঁদের পৃষ্ঠের ওপর পৃথিবীর ছায়া ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং পরে তা কমে যায়। তবে পুরো চাঁদ পৃথিবীর ছায়ার আড়ালে চলে যায় না।
উপচ্ছায়া চন্দ্রগ্রহণ: এই চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ সরাসরি পৃথিবীর মূল ছায়ার ভেতরে থাকে না। বরং ছায়ার বাইরের অংশ বা উপচ্ছায়ার ভেতর দিয়ে যায়। এর ফলে চাঁদ স্বাভাবিকের চেয়ে কম উজ্জ্বল দেখায়।
চাঁদ কেন লাল দেখায়
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ লাল বা কমলা রং ধারণ করে। এই চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্যের যেটুকু আলো চাঁদে পৌঁছায়, সেই আলো প্রথমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। এই অতিক্রমের সময় বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণা, পানির কণা ও গ্যাসের সঙ্গে ধাক্কা খায় সূর্যের আলো। এর ফলে ‘রেইলি বিচ্ছুরণ’–এর ঘটনা ঘটে।
সূর্যরশ্মি সাতটি রঙের আলো নিয়ে গঠিত। রেইলি বিচ্ছুরণের সময় সূর্যের সাতটি রঙের আলোর মধ্যে যে রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি, সেটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাধা অতিক্রম করে চাঁদে পৌঁছাতে পারে। আর যে রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম, সেটি চাঁদে পৌঁছানোর আগেই বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
সূর্যরশ্মির সাতটি রঙের আলোর মধ্যে বেগুনি রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম এবং লাল রংয়ের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। এর ফলে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্যের লাল রঙের আলো চাঁদে পৌঁছাতে পারে এবং সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়লে আমরা রক্তিম চাঁদ দেখতে পাই।
রক্তিম চন্দ্রগ্রহণ কখন হবে
এবারের চন্দ্রগ্রহণ পশ্চিম গোলার্ধের বেশির ভাগ অঞ্চল থেকে দেখা যাবে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বাসিন্দারা পুরো চন্দ্রগ্রহণ অবলোকন করতে পারবেন। গ্রহণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলবে নিচের সময় অনুযায়ী—
উপচ্ছায়া চন্দ্রগ্রহণ শুরু: গ্রিনিচ মান সময় ৩টা ৫৭ মিনিট।
আংশিক চন্দ্রগ্রহণ শুরু: গ্রিনিচ মান সময় ৫টা ৯ মিনিট।
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু: গ্রিনিচ মান সময় ৬টা ২৬ মিনিট।
সর্বোচ্চ গ্রহণ (এ সময় সবচেয়ে গাঢ় লাল রঙের চাঁদ দেখা যাবে): গ্রিনিচ মান সময় ৬টা ৫৮ মিনিট।
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শেষ: গ্রিনিচ মান সময় ৭টা ৩১ মিনিট।
আংশিক চন্দ্রগ্রহণ শেষ: গ্রিনিচ মান সময় ৮টা ৪৭ মিনিট।
উপচ্ছায়া চন্দ্রগ্রহণ শেষ: গ্রিনিচ মান সময় ৯টা ৫৯ মিনিট।
অর্থ্যাৎ, গ্রিনিচ মান সময় ৩টা ৫৭ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত চন্দ্রগ্রহণ চলবে। এর মধ্যে পূর্ণগ্রহণ পর্যায় চলবে প্রায় ৬৫ মিনিট। এই সময়ে চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ার আড়ালে থাকবে।
রক্তিম চাঁদ কি বিরল
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বিরল নয়, তবে প্রায়ই যে এটা ঘটে, বিষয়টি তেমনও নয়। প্রতি দশকে কয়েকবার পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ রক্তিম চাঁদ দেখা গিয়েছিল ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর। আর পরবর্তী এমন চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে ২০২৫ সালের ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর। পুরো এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের কিছু অংশে এটি দেখা যাবে।
কীভাবে দেখা যাবে রক্তিম চাঁদ
বলা চলে মহাকাশের ঘটনাগুলোর মধ্যে চন্দ্রগ্রহণ অবলোকন করা সবচেয়ে সহজ। ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকালেই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায়, টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলার না হলেও চলে। তবে টেলিস্কোপের সহায়তা নিলে চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের পৃষ্ট আরও ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নাসার পরামর্শ হলো অন্ধকার কোনো এলাকা থেকে চন্দ্রগ্রহণ দেখা। এতে করে চন্দ্রগ্রহণ আরও উজ্জ্বলভাবে দেখা যায়। শহরের আলোর কারণে আলোদূষণ হয়ে থাকে। এতে করে চন্দ্রগ্রহণ উপভোগে সমস্যা দেখা দেয়।
সূত্র: আল জাজিরা ও প্রথম আলো