অনলাইন ডেস্ক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি দলের আরেক সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর কিছু বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন এবং বৈঠকের আলোচনা ফেসবুকে প্রকাশের প্রক্রিয়াটি সমীচীন হয়নি বলে মনে করেন।
আজ রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই বিষয়ে বক্তব্য দেন।
সারজিস আলম জানান, ১১ মার্চ সেনানিবাসে তাদের (হাসনাত ও সারজিস) ডেকে নেওয়া হয়নি, বরং তারা নিজেরাই যোগাযোগ করে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে এনসিপির আরও একজন নেতার যাওয়ার কথা থাকলেও ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তবে ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি সারজিস।
তিনি আরও জানান, সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্যের পর তারা স্বপ্রণোদিতভাবে তার মিলিটারি অ্যাডভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এরপর সেনানিবাসে যান। বৈঠকে সেনাপ্রধান, হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম উপস্থিত ছিলেন।
সারজিস আলম বলেন, ওই বৈঠকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আলোচনায় আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কিনা, এ নির্বাচনে থাকলে কী হবে, না থাকলে কী হবে, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে কিনা এবং এসব বিষয় দেশের স্থিতিশীলতার ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে—এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
তবে হাসনাত আব্দুল্লাহর দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সারজিস বলেন, সেনাপ্রধান ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের জন্য চাপ দিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন না। বরং সেনাপ্রধান ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে, তা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাখ্যা করেছেন।
হাসনাতের বক্তব্যের কিছু অংশের সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে সারজিস বলেন, “মানুষ হিসেবে যেকোনো ব্যক্তি অভিমতকে ভিন্নভাবে অবজার্ভ করতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই আলোচনাকে সরাসরি ‘প্রস্তাব’ দেওয়ার আঙ্গিকে দেখিনি, বরং ‘অভিমত প্রকাশ’ হিসেবে দেখেছি। ‘অভিমত প্রকাশ’ এবং ‘প্রস্তাব দেওয়া’—এই দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সেনাপ্রধান ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের জন্য চাপ দিয়েছেন বলে আমার মনে হয়নি। বরং তিনি বলেছেন, যদি আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে না ফেরে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের পরিস্থিতির ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে, তা তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন।”
‘সারজিস আলম স্বীকার করেছেন যে, বৈঠকের একপর্যায়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, “যে দল এখনো ক্ষমা চায়নি, অপরাধ স্বীকার করেনি, সেই দলকে কিভাবে ক্ষমা করবেন?” এ সময় সেনাপ্রধান উত্তরে বলেছিলেন, “You people know nothing. You lack wisdom and experience. We are in this service for at least forty years. তোমার বয়সের থেকেও বেশি।”
Ezoic
তবে এই মন্তব্যের টোন নিয়ে হাসনাতের সঙ্গে মতানৈক্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন সারজিস। তার মতে, “এই কথোপকথন বিদায় নেওয়ার সময়, রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে হয়েছে। সেনাপ্রধান রেগে যাওয়ার সুরে বলেননি, বরং বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ অভিজ্ঞতার কথা যেভাবে ব্যাখ্যা করেন, সেই টোন ও এক্সপ্রেশনেই বলেছেন।”
সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যোগাযোগের গোপনীয়তা বজায় রাখা উচিত বলে মনে করেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, “আমাদের বৈঠকের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দলের ফোরামে আলোচনা করতে পারতাম, সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। তবে যেভাবে কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে, আমি তা সমীচীন মনে করি না। এতে ভবিষ্যতে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাইলে আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু ফেসবুকে এভাবে প্রকাশ করায়, তা রাজনৈতিক কৌশলের দিক থেকে সঠিক হয়নি।”
সারজিস আলম জানান, তার এই বক্তব্য হাসনাত আব্দুল্লাহর কিছু বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করলেও, এতে ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই। তিনি বলেন, “আমাদের ব্যক্তিত্ব কখনো স্রোতে গা ভাসানোর মতো ছিল না। আমরা হাসিনা রেজিমের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়েছি। আজও কেউ হাসনাতের দিকে বন্দুক তাক করলে, তার সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কমিটমেন্ট আমাদের আছে। তবে সহযোদ্ধার বক্তব্য সংশোধনের প্রয়োজন মনে করলে, সেটাও আমি করব।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের রাজনৈতিক পুনরুত্থানের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।”